Tuesday, October 14, 2025

সারাদেশে একযোগে চালু হলো সম্পত্তি ভাগ বন্টনের নতুন আইন

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ও যৌথ মালিকানাধীন জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও জটিলতা চলে আসছে। এসব সমস্যার সমাধানে ২০২৫ সাল থেকে সরকার একযোগে জমি বণ্টনের নতুন নিয়ম চালু করেছে। এর ফলে পূর্বের হয়রানিমূলক প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন এই ব্যবস্থায় ভূমি মালিকরা সহজে তাদের অংশ বুঝে নিতে পারবেন।

নতুন নিয়মে কী থাকছে?

আগে উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পাওয়া কোনো ওয়ারিশ শুধুমাত্র ওয়ারিশান সনদ দেখিয়ে নিজের অংশের নামজারি করতে পারতেন। এতে তিনি প্রায়ই জমির সবচেয়ে মূল্যবান বা সুবিধাজনক অংশ নিজের নামে করে নিতেন এবং পরে সেটি বিক্রয় করতেন। এতে অন্যান্য ওয়ারিশ বঞ্চিত হতেন এবং জটিল মামলা-মোকদ্দমার সৃষ্টি হতো।

এখন থেকে বণ্টননামা দলিল ছাড়া আর কোনো ওয়ারিশ তার অংশের জমির নামজারি বা বিক্রয় করতে পারবেন না। অর্থাৎ, সব ওয়ারিশকে মিলেই বণ্টননামা দলিল তৈরি করতে হবে। তারপর সেই দলিলের ভিত্তিতেই নামজারি ও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ  হাত বিচ্ছিন্ন ইসরায়েলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশ

তবে যদি সব ওয়ারিশ একসাথে সম্মিলিতভাবে যৌথ খতিয়ান তৈরি করে নামজারি করতে চান, সেক্ষেত্রে তারা এসিল্যান্ড (SLR) এর কাছে আবেদন করতে পারবেন। এসিল্যান্ড যাচাই-বাছাই শেষে তাদের যৌথ খতিয়ান দেবেন, যা দিয়ে তারা খাজনা পরিশোধ এবং চাইলে জমি বিক্রয় করতে পারবেন। তবে যৌথ খতিয়ানের জমি বিক্রি করতে হলে সব ওয়ারিশকেই একসাথে বিক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে।

বাটোয়ারা মামলা সহজ হলো

যদি সব ওয়ারিশ একমত না হন, সেক্ষেত্রে একজন ওয়ারিশ তার ন্যায্য অংশ আদায়ে বাটোয়ারা মামলা করতে পারবেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাটোয়ারা মামলার প্রক্রিয়া সহজ ও সময়সীমা নির্ধারিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  রাতেই দেখা মিলবে গোলাপী চাঁদের

বাটোয়ারা মামলা দায়েরের শর্তাবলি:

জমি যৌথভাবে মালিকানাধীন হতে হবে।

অন্য ওয়ারিশরা স্বেচ্ছায় ভাগাভাগি করতে রাজি না হলে।

মৌখিক বা লিখিতভাবে সমাধান সম্ভব না হলে।

বাটোয়ারা মামলার ধাপসমূহ:

মামলা দায়ের করতে হবে সিভিল কোর্টে (সিনিয়র সহকারী জজ আদালত)।

বাদীকে মালিকানার প্রমাণ হিসেবে দলিল, খতিয়ান, খাজনা রশিদ, ওয়ারিশান সনদ ইত্যাদি উপস্থাপন করতে হবে।

আদালত বিবাদীদের নোটিশ দেবে এবং সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করবে।

দলিল ও সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপনের পর আদালত প্রাথমিক ডিগ্রি (কে কত অংশের মালিক) ঘোষণা করবে।

পরে আদালত কর্তৃক নিযুক্ত আমিন মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জমি পরিমাপ করে বাস্তব বণ্টনের খসড়া নকশা জমা দেবেন।

আরও পড়ুনঃ  ‘বাজারে ডাকাত এসেছে, আপনারা বের হন’

আদালত নকশা অনুমোদন করলে ফাইনাল ডিগ্রি জারি হবে এবং মামলার নিষ্পত্তি হবে।

পূর্বে এ ধরনের মামলা বছরের পর বছর চললেও এখন নতুন নিয়মে ১ থেকে ২ বছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি হবে।

কেন এ নিয়ম কার্যকর করা হলো?

সরকার মনে করছে, পূর্বের প্রক্রিয়ায় নামজারি ও বিক্রয় করার সুযোগ থাকায় অসংখ্য মামলা ও জমি বিরোধের সৃষ্টি হতো। নতুন নিয়মে বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক হওয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের জটিলতা ও প্রতারণা বন্ধ হবে। এতে বঞ্চিত উত্তরাধিকারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার সহজে ফিরে পাবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগের ফলে ভাই-বোনসহ সব উত্তরাধিকার সমানভাবে তাদের সম্পত্তির অংশ পাবেন। কোনো ওয়ারিশ এককভাবে সুবিধাজনক জমি দখল বা বিক্রয় করতে পারবেন না।

আপনার মতামত লিখুনঃ

জনপ্রিয় সংবাদ