আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল, ছবির মতো সুন্দর এই শহর বর্তমানে তালেবান শাসিত। পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসার পর তালেবান জাঁকিয়ে বসেছে ঠিকই, কিন্তু এখন তারা এবং কাবুল শহর মুখোমুখি মহা সংকটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুল সম্পূর্ণ পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। এর নেপথ্যে রয়েছে শহরের তীব্র পানি সংকট, দীর্ঘ খরা ও দারিদ্র্য।
বর্তমানে কাবুলের জনসংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। দুর্গম হিন্দুকুশ পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় অবস্থিত এই শহর ১৯৭৬ সাল থেকে আফগানিস্তানের রাজধানী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত এবং সাংস্কৃতিক সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত। সংঘাত ও সহিংসতার মধ্যেও শহরটি নিজের জৌলুস ধরে রেখেছে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এর উপর চরম চাপ সৃষ্টি করছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা মার্সি কর্পসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই কাবুলে পানি ফুরিয়ে যেতে পারে। এই সংকট শহরকে অর্থনৈতিক পতনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত উত্তোলনের কারণে গত দশকে কাবুলের পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ মিটার নিচে নেমে গেছে। শুকিয়ে গেছে শহরের প্রায় অর্ধেক কূপ। বর্তমানে বছরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি পানি উত্তোলন হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক পুনঃভরণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুল একটি পানিশূন্য নগরীতে পরিণত হবে। পানি সংকটে বাস্তুচ্যুত হতে পারে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। তিন দশক আগেও শহরটির জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে, কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুই দশকের সামরিক আগ্রাসনের ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ বাধ্য হয়ে কাবুলে এসে বসতি গড়ে। এর ফলে শহরের উপর চাপ আরও বেড়ে যায়।
বর্তমানে বহু পরিবার দিনে মাত্র ৪-৫ লিটার পানি দিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই পানির জন্য লড়াই শুরু হয় কাবুলবাসীর মধ্যে। এই পরিস্থিতি কেবল মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং পুরো শহরের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।