ইকুয়েডরের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে রবিবার এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে এবং ১৭ জন সেনাকে জিম্মি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংঘর্ষের উভয় পক্ষ।
ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ার জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটির সবচেয়ে বড় আদিবাসী অধিকার সংগঠন কোনায়ে অনির্দিষ্টকালের জাতীয় ধর্মঘটের ডাক দেয়। ভর্তুকি কাটছাঁটের ফলে ডিজেলের দাম গ্যালনপ্রতি ১.৮০ ডলার থেকে বেড়ে ২.৮০ ডলার হয়েছে।
কোনায়ে জানায়, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য ৪৬ বছর বয়সী এফ্রেইন ফুয়েরেজকে ‘তিনবার গুলি করা হয়’ এবং তিনি কোটাকাচির একটি হাসপাতালে মারা যান।
কোটাকাচি রাজধানী কুইটো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
এ অভিযোগে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এক্সে কোনায়ের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন সেনা মাটিতে পড়ে থাকা দুই ব্যক্তিকে লাথি মারছে—এদের একজন আহত বলে মনে হচ্ছিল এবং অন্যজন তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিল।
কোনায়ে বলেছে, ‘আমরা এ জন্য ড্যানিয়েল নোবোয়ারকে দায়ী করছি এবং এফ্রেইন ও তার সম্প্রদায়ের জন্য অবিলম্বে তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি।
এর কিছুক্ষণ পর একই শহরে ইকুয়েডরের সেনারা জানায়, বিক্ষোভকারীরা ১২ জন সেনাকে আহত করেছে এবং আরো ১৭ জনকে জিম্মি করেছে।
সামরিক বাহিনীর দাবি, সেনারা একটি খাদ্যবাহী কনভয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল, তখনই তারা ‘কোটাকাচিতে অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে সহিংসভাবে হামলার শিকার হয়।’
তারা এক্সে রক্তাক্ত সেনাদের ছবি ও একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত এক ডজন লাঠিধারী মানুষ একজন সেনাকে ঘিরে পেটাচ্ছে।
তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে মারবেন না।’
সরকারি মন্ত্রী জায়দা রোভিরা ঘটনাটিকে ‘অপরাধী গোষ্ঠী—সন্ত্রাসীদের দ্বারা সেনাদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিক্ষোভ সামলাতে নোবোয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২৪টি প্রদেশের মধ্যে আটটিতে জরুরি অবস্থা ও পাঁচটিতে রাতের কারফিউ ঘোষণা করেন।
তিনি দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্র ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ এই বিক্ষোভের পেছনে রয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
কোনায়ে অতীতে ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
বিক্ষোভকারীরা এবারও সড়ক অবরোধ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের মাধ্যমে নোবোয়ার প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এ পর্যন্ত বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে।
এফ্রেইন ফুয়েরেজের ঘটনায় ‘প্রাণঘাতী ও অবৈধ শক্তি প্রয়োগের’ নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইএনআরইডিএইচ।
দেশটির প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, এ ‘অভিযোগিত হত্যার’ বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হবে।
সর্বশেষ জনগণনায় দেখা গেছে, ইকুয়েডরের এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রায় ৮ শতাংশ আদিবাসী। তবে সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা অন্তত ২৫ শতাংশ।