দখলদার ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের ফলে ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় এক ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে ইসরায়েল সেখানে ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। এতে শিশুসহ লাখ লাখ মানুষ অনাহার, অপুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে দিন কাটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে গণহত্যার শামিল বলে আখ্যা দিয়েছে।
গাজার অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে এলো ত্রাণবাহী নৌবহর
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গাজার অবরোধ ভাঙতে এগিয়ে এসেছে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের একটি বৈশ্বিক ত্রাণবাহী নৌবহর। ইসরায়েলি হামলার হুমকি উপেক্ষা করে তারা গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। সম্প্রতি লিবিয়ার জাহাজ ‘ওমর আল-মুখতার’ এই নৌবহরে যুক্ত হয়েছে।
রবিবার এই জাহাজটির মুখপাত্র নাবিল আল-সুকনি বলেন, “গাজার অসহায় মানুষদের সাহায্যের জন্য আমরা লিবিয়ার জনগণের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন পেয়েছি। আমরা এখন আমাদের সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।” তিনি জানান, তারা গাজায় অসহায় মানুষদের জন্য তাঁবু, খাবার, ওষুধ এবং শিশুদের গুঁড়ো দুধ নিয়ে যাচ্ছেন। লিবিয়ার এই জাহাজে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওমর আল-হাশিও রয়েছেন।
চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা
চিকিৎসা সেবার জন্য জাহাজে একটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হয়েছে। গাজায় পৌঁছানোর পর গুরুতর আহত রোগীদের এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। চিকিৎসক আব্দুল রহমান হুমায়দ বলেন, “আমাদের জাহাজে একটি মেডিকেল টিম রয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ওষুধ নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। আহত মানুষদের জন্য এই জাহাজে সব সুবিধা সম্পন্ন একটি অস্থায়ী আইসিইউ বসিয়েছি।”
চরম দুর্দশা ও আন্তর্জাতিক আহ্বান
সম্প্রতি গাজা শহরে ইসরায়েলি সেনাদের হামলার তীব্রতা বেড়েছে, যা দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের জীবনকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে ইতালীয় বন্দর থেকে ৪৪টির মতো জাহাজ গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। গ্রিসের বন্দর থেকে আরও ছয়টি জাহাজ যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই বহর এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় পৌঁছাবে।
এই বহরের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ভেঙে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। তবে এর আগে দুই দফায় ইসরায়েলি সেনারা ত্রাণবাহী জাহাজের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে, এই ত্রাণবাহী নৌবহরকে সুরক্ষা দিতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
শেখ ফরিদ