দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাপ্রধান জেনারেল রুদজানি মাফওয়ান্যা তার দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন। ইরানে সরকারি সফরের সময় করা কথিত মন্তব্য প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়। শনিবার (১৬ আগস্ট) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
এতে বলা হয়, যখন প্রিটোরিয়া বাণিজ্য স্থিতিশীল করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে, তখনই ওই মন্তব্যগুলো এসেছে। মন্তব্যে বলা হয়েছে, ইরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অভিন্ন সামরিক লক্ষ্য রয়েছে।
গত সপ্তাহে, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশটির ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করার পরেও এই শুল্ক ঘোষণা করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার তেহরানে ইরানি প্রতিপক্ষ মেজর-জেনারেল সাইয়্যেদ আবদুর রহিম মুসাভির সাথে সাক্ষাৎকালে রুজদানি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা, প্রেস টিভি এবং তেহরান টাইমস অনুসারে।
কমান্ডার রুজদানি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রতি ইরানের ঐতিহাসিক সমর্থনের কথা স্মরণ করে বলেছেন, এই সম্পর্ক দুটি জাতির মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধন তৈরি করেছে। তেহরান টাইমস অনুসারে, তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য একই। আমরা সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত ও অরক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
এদিকে, তেহরান টাইমস জানায়, রুজদানি ইসরাইলের খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের উপর বোমাবর্ষণ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন।
এরপর বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার কার্যালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, জেনারেল রুজদানির ইরান সফর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট অবগত ছিলেন না, যদিও এই ধরনের সফর সাধারণত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হবে, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে নয়।
রামাফোসা ২০২১ সালে রুজদানিকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। বর্ণবাদ-যুগের দক্ষিণ আফ্রিকায় জেনারেল রুজদানি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এর সেনা শাখায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যা একটি মুক্তি আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল।
এদিকে, প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জেনারেলের ইরান সফরের সিদ্ধান্তটি খুব খারাপ সময়ে করা হয়েছে।
‘মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাতের এই তীব্র সময়ে, কেউ বলতেই পারে যে এই সফরটি অযৌক্তিক ছিল এবং জেনারেলের তার মন্তব্যের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’ বলেন তিনি।
ভিনসেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাণিজ্য সম্পর্ককে এমনভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করা যাতে বাণিজ্য সম্পর্ক পারস্পরিকভাবে লাভজনক হয়।’
একইভাবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনাপ্রধানের কথিত মন্তব্যের সাথে সরকারকে আলাদা করেছে।