মোসাদের গোপন নেটওয়ার্ক দীর্ঘদিন ধরে ইরানে সক্রিয় রয়েছে বলে ইরান দাবি করে আসছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মূলত গোপন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ইরানের ভেতরে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। ইরানের ধারণা, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ইসরায়েল সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। ১৩ জুন, ইসরায়েল যখন ইরানে সরাসরি বিমান হামলা শুরু করে, তখন স্পষ্ট হয় যে দেশের ভেতরে আগে থেকেই সক্রিয় ছিল এই সহায়তাকারী শক্তি। তবে এবার মোসাদের এসব গোয়েন্দা বাহিনী আর রক্ষা পায়নি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ইরান জুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তারি অভিযান চালানো হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্দেহভাজনদের মধ্যে মোসাদের হয়ে কাজ করা এজেন্টরাও রয়েছে। ১২ দিনের মধ্যে প্রায় ২১,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সন্দেহভাজন চর বা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
আটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ অবৈধ অভিবাসী, বিশেষ করে আফগান নাগরিক। ইরানের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে, ২,৭৭৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২৬১ জনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে চর বৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে মোসাদ তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তারে অভিবাসী জনগোষ্ঠীকেও ব্যবহার করেছে।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযোগ করেছে, যুদ্ধের সময় বহু ব্যক্তি বেয়নিভাবে ভিডিও ধারণ ও তথ্য প্রেরণের কাজে জড়িত ছিল। ১৭২ জনকে এ কারণে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির ভিডিও বিদেশে পাঠিয়েছে, যা ইসরায়েলের হামলা পরিকল্পনায় সহায়ক হয়েছে। ইরানের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিল, সন্দেহজনক আচরণ চোখে পড়লে তা দ্রুত থানায় জানানো হোক। এই আহ্বানের পর অভিযোগ হার প্রায় ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। মূলত এই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিপুল সংখ্যক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়।
বর্তমানে সাইবার অপরাধ ও গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ৫৭,০০০-এর বেশি মামলা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আটকৃতদের কতজন প্রকৃত এজেন্ট বা নিরপরাধ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই ব্যাপক গ্রেপ্তারি অভিযান দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।