Sunday, August 10, 2025

বাবরের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত বিরোধিতা না জনপ্রিয়তা?

আরও পড়ুন

আদালতের রায়ে মুক্তি পেয়ে গত জানুয়ারিতে বাবর মুক্ত বাতাসে ফিরে আসেন। তাকে বরণ করতে কারাগার সম্মুখে জড়ো হয়েছিলেন, নিজ এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী, সমর্থক, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর |ইন্টারনেট
বহুল আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কারামুক্ত লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে আবারো নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতাকে নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে দলের আর কোনো নেতাকে নিয়ে তা হয়নি।

বলা যায়, তার নিজস্ব হেয়ার স্টাইল, ভাষা ও বাংলিশ বলার জন্য তিনি সকলের কাছে আলোচিত ও সমালোচিত। এক সময় নিত্যদিন মিডিয়ার সামনে নিজের মত করে বক্তব্য দিতে দেখা যেত। তার বিখ্যাত উক্তি ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’ নিশ্চই মনে আছে প্রিয় পাঠকদের।

নানান জনে নানানভাবে মূলায়ন করলেও দেশ প্রেম ও ভারত বিরোধীতার কারণে তার জনপ্রিয়তা হয়ে উঠে আকাশচুম্বী। তবে ভারত বিরোধিতা ও অসম্ভব জনপ্রিয়তাই কি বাবরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে? এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাড়ে ১৭ বছর কারাভোগ শেষে তার থাকার কথা ছিল দলের শীর্ষ স্থানে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দলের কোনো পদ-পদবিতে কোনো নামই নেই তার। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্রভাবশালী এই নেতা আজ নিজ দলেই অবজ্ঞা ও বঞ্চনার শিকার। দলীয় কোনো সভা, সমাবেশ, টকশো কিংবা মিডিয়াতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমেও নেই কোনো আলোচনা। বলা যায়, নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে থেকে ফিরে আসা এক সময়ের সরব লুৎফজ্জামান বাবর এখন নিশ্চুপ এক রহস্যের বেড়াজালে আটকে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনে অসংগতির তথ্যচিত্র বিদেশিদের দেবে বিএনপি

আদালতের রায়ে মুক্তি পেয়ে গত জানুয়ারিতে বাবর মুক্ত বাতাসে ফিরে আসেন। তাকে বরণ করতে কারাগার সম্মুখে জড়ো হয়েছিলেন, নিজ এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী, সমর্থক, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তখন আবেগ আপ্লুত এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বাবরের জনপ্রিয়তার সাথে বিএনপির আর কোনো নেতার তুলনা করা যায় কি? তার এই ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তাও তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শীর্ষ নেতাদের ভয় ও আশঙ্কা বাবর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন কিনা ? যে কারণে বাবর পলিটিক্যাল পলিট্রিক্সের বলি হয়ে গেছেন।

দেশের এই সঙ্কটের সময়ে তার মতো দেশপ্রেমিক দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের অধিকারী নেতার খুবই প্রয়োজন। ভারতের আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনিই বলিষ্ঠভাবে রুখে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু চলমান এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে সময়োপযোগী নেতৃত্বের সঙ্কট দেখা দিলে রাজনৈতিক অঙ্গণে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

লুৎফুজ্জামান বাবর একজন ব্যবসায়ী থেকে বিশেষ রাজনৈতিক নেতাতে পরিণত হন। তিনি ছিলেন মাস্টার ইলেক্ট্রনিকস-এর স্বত্বাধিকারী ও জাপানিজ কেসিও ঘড়ির বাংলাদেশ ডিলার। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু অল্প দিনের ব্যবধানে তিনি বিএনপিতে যোগদান করে সক্রিয় হয়ে উঠেন।

আরও পড়ুনঃ  বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ, থানায় অভিনেত্রী

১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মমিনকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। প্রতিমন্ত্রী হয়েও অত্যন্ত দাপটের সাথে এককভাবে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। তার মন্ত্রিত্বকালে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ধরা পড়ে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলা বারুদের চালান। চাউর হয়ে যায় ভারতের সেভেন সিস্টার বা পূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে তা পাঠানো হচ্ছিল। এই অস্ত্র চালানের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে বাবরকে সন্দেহ করা হয়। আর তখন থেকেই ভারত বিরোধিতা ও ভূমিকার কারণে বাবর ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠেন। যে কারণে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। আর তখন থেকেই পাঠার বলি হয়ে বাবরের কপাল পুড়তে শুরু করে।

কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে ২০০৭ সালে আকস্মিকভাবে বাবরকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা হয় ১০ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের আদেশ দেয়া হয়। সাড়ে ১৭ বছর কারাভ্যন্তরে অমানুষিক যন্ত্রণায় মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন লুৎফুজ্জামান বাবর।

আরও পড়ুনঃ  ওসির কবজিতে কামড় দিয়ে পালালেন যুবলীগ নেতা

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতনের পর উচ্চ আদালতের আদেশে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে কারামুক্ত হন। তিনি যে আশা ও স্বপ্ন নিয়ে কারামুক্ত হয়ে এসেছিলেন তার চেয়েও অধিক ভালোবাসা, প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা পেয়েছেন নিজ জেলা নেত্রকোনাবাসীর কাছ থেকে। যা স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে সেদিন দেখা যায়নি কারা ফটকে। বরং তার এই জনপ্রিয়তায় হাই কমান্ডের অনেকে ভেতরে ভেতরে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। বিএনপির দুর্দিনে যাদের ফ্যাসিবাদের সাথে আপস করে চলতে দেখা গেছে আজ তারাই দলের উচ্চাসনে চালিকা শক্তি। আর দলের জন্য জীবন, যৌবন নিঃশেষ করা লুৎফুজ্জামান বাবর হয়ে উঠেছেন এক অপাঙ্‌ক্তেয় ব্যক্তিতে।

ঘুরে ফিরে লুৎফুজ্জামান বাবর আবারো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে উঠছেন, তিনি নাকি বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিচ্ছেন? স্যোশাল মিডিয়ার এমন সংবাদে চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। কিন্তু এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, লুৎফুজ্জামান বাবর এতটাই জনপ্রিয় যে তাকে যে দলেরই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন, শুধু তার নিজ নির্বাচনী আসন নয় নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের যে কোনো একটিতে অংশ নেন, অতি সহজেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই এমনটাই আশা করছেন নেত্রকোনাবাসী।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ