বাংলাদেশের আগামী ৫০ বছরের সাংস্কৃতিক, একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব এক্স-শিবিরের হাতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য।
শুক্রবার রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পোস্টে পিনাকী ভট্টাচার্য লেখেন, বাংলাদেশের আগামী পঞ্চাশ বছরের সাংস্কৃতিক, একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনই লেখা যায়: এটি থাকবে এক্স শিবিরের হাতে। যারা ভাবছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশও বামঘরানার বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর হাতে বন্দি থাকবে, তারা ভীষণ ভুল করছে। সেই যুগ শেষ। এবার যে ধারা শুরু হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এই প্রজন্ম ভারতমুখী নয়, আদর্শগতভাবে আপসকামী নয়, এবং তুলনামূলকভাবে সৎ।
আমি বহুবার বলেছি, আগামী দিনের বাংলাদেশে শিবিরের রাজনৈতিক স্কুলিং রাজ করবে। যেমন একসময় ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ বা উদীচী তাদের সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক ও ক্যাডারভিত্তিক গঠনের মাধ্যমে সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, একাডেমিয়া, এমনকি রাজনীতির শীর্ষস্তর পর্যন্ত অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঠিক তেমনি আগামী কয়েক দশকে সেই জায়গা দখল করবে শিবির-স্কুলিং প্রজন্ম।
এই প্রভাব সরাসরি জামায়াতের পতাকা হাতে আসবে না, যেমন সিপিবি তাদের সংগঠিত শক্তি থাকা সত্ত্বেও জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু সমাজের পেশাগত পরিসর, নীতি-নির্ধারণী কাঠামো এবং রাজনৈতিক বলয়ে শিবির-স্কুলিং প্রজন্ম ঢুকে পড়বে—অদৃশ্য অথচ অনিবার্য শক্তি হিসেবে।
তিনি লেখেন, ৫ আগস্টের পর একটি কথা ভাইরাল হয়েছিল—”মানুষ মাত্রই শিবির”। শুনতে মজার লাগলেও এর ভিতরে একটি বাস্তবতা আছে। দেশে-বিদেশে যোগ্য মানুষ খুঁজতে গেলে একসময় আপনি নিজেই অবাক হয়ে দেখবেন, আপনার সামনে বসে থাকা সফল পেশাজীবীর রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা শিবিরের হাত ধরে।
কেন? কারণ গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদের দমননীতি সব সংগঠনকে ধ্বংস করলেও, ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক স্কুলিং-এর প্রতিষ্ঠান হিসেবে একমাত্র শিবিরই টিকে আছে। কঠোর শৃঙ্খলা, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, এবং নেটওয়ার্ক রক্ষা করার ক্ষমতা দিয়ে। এই ধারাবাহিকতার মূল্য ভবিষ্যৎ বাংলাদেশই পরিশোধ করবে—ক্ষমতা ও প্রভাবের মাধ্যমে।
নীচের ছবিটি এক যুগ আগে তোলা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শুরুর সময়কার আন্দোলনের সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্ত। ছবির এই তরুণ তখন রাজপথে জীবন বাজি রেখে লড়েছিল, আজ তিনি দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। এটি মূলত একজন মানুষের গল্প না এটি একটি সংগঠিত স্কুলিং-এর সাফল্যের প্রতীক।
তার সমবয়সীরা আজও হয়ত কোনো কমিটির সহ-সভাপতি হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে; অথচ এই মানুষটি নিঃশব্দে সমাজে তার অবস্থান দৃঢ় করে ফেলেছে। এই ছবিটি তিনি নিজে সামনে আনেন না, কিন্তু মানুষ তাকে খুঁজে নিয়েছে। কারণ এই ছবি একসময় আন্দোলনের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।