Wednesday, October 8, 2025

আরও একটা যুদ্ধ টেনে আনছেন ট্রাম্প

আরও পড়ুন

একদিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে ক্যারিবীয় সাগরের নীল জলরাশিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অদ্ভুত কৌশল এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। হঠাৎ করেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর অন্তত আটটি যুদ্ধজাহাজ এবং ৪,০০০-এরও বেশি সেনা সদস্য। পুয়ের্তো রিকোতে ঘাঁটি গেড়েছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও।

সামরিক উপস্থিতি: উদ্দেশ্য শুধু মাদক দমন নয়
ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এত বড়সড় সামরিক উপস্থিতি কেবল প্রদর্শনের জন্য নয়। বিপুল সংখ্যক সেনা, জাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হলে ‘সব রকমের বিকল্পই মাথায় রাখা হচ্ছে’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এত বিপুল শক্তি দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়, যা অন্য জায়গায় সামরিক মোতায়েনকেও প্রভাবিত করবে।

আরও পড়ুনঃ  গণপিটুনিতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু : চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা

এই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই মার্কিন বিচার বিভাগ তার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে মামলা করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, মাদুরো আঞ্চলিক মাদক চক্রের সঙ্গে কাজ করছেন, যারা কোকেন ও ফেন্টানিলের মতো মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। সম্প্রতি তার মাথার দাম ৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

আসল লক্ষ্য কি সরকার পতন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেনেজুয়েলা নিজে তেমন বড় কোকেন উৎপাদক নয়, বরং দেশটি এখন মূলত ট্রানজিট পয়েন্ট। অবৈধ ফেন্টানিলের সিংহভাগই আসে মেক্সিকো হয়ে। তবুও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন—শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, এর আড়ালে আরো বড় লক্ষ্য থাকতে পারে, আর তা হলো মাদুরো সরকারের পতন।

আরও পড়ুনঃ  বক্তব্য ভাইরাল হওয়া সেই ওসিকে প্রশংসাপত্র পাঠালেন আইজিপি

এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, মূল কৌশল হচ্ছে মাদুরোকে এমনভাবে চাপে ফেলা যাতে তিনি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ নেন এবং শেষ পর্যন্ত আমেরিকান সেনাদের মাটিতে না নামিয়েই নিজে ক্ষমতাচ্যুত হন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই অবস্থানে সবচেয়ে জোরালো কণ্ঠস্বর তুলেছেন। তার বক্তব্য, মাদুরো যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবেন, ভেনেজুয়েলা কখনো স্থিতিশীল হবে না।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও ট্রাম্পের সতর্কতা
সামরিক চাপের পাশাপাশি কিছু কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চলছে। ভেনেজুয়েলার সরকার চলতি মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি চিঠির ভাষা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “চিঠিতে মাদুরো অনেক মিথ্যা দাবি করেছেন। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা মাদুরো সরকারকে অবৈধ মনে করি এবং প্রেসিডেন্ট দেখিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাদক পাচার ঠেকাতে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”

আরও পড়ুনঃ  ৪১ হাজার শিক্ষক নিয়োগে সুখবর আসছে

তবে বাস্তবতা হলো, দুটি দেশের মধ্যে কিছু সহযোগিতা এখনো চলছে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে নিয়মিত ফ্লাইট সম্পন্ন হয়েছে। এই সমীকরণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত রিচ গ্রেনেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি ভেনেজুয়েলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে কূটনৈতিক পথ খোলা রাখার পক্ষপাতী এবং ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যেন সামরিক চাপের পাশাপাশি আলোচনার পথও বজায় থাকে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

জনপ্রিয় সংবাদ