চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম। আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারিভাবে মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ ২২দিনে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সন্ধা ও সুগন্ধা নদী বেষ্টিত বরিশালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা বলেন-সরকারের নির্দেশ শতভাগ পালন করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ তালিকাভূক্ত জেলেদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।
ইলিশের অভ্যায়রন্য বলেখ্যাত মেঘনা নদী বেষ্টিত হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন-ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় গতবছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। সাধারনত পুনির্মা ও আমাবশ্যার ওপর নির্ভর করে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সে অনুযায়ী এবছর ৭ অক্টোবর পুনির্মা শুরু হবে। এর চারদিন পিছিয়ে দেয়ায় এবার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিনের নিষেজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসেই রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ হতে মাত্র তিনদিন বাকি থাকলেও মোকামগুলোতে ইলিশের আমদানী যেমন কম, তেমনি দামও অস্বাভাবিক। এমতাবস্থায় জেলে, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা জানিয়েছেন, এবছর আর বরিশালের নদ নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিললো না।
তবে মৎস্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন-নানা প্রতিকূলতার কারনে নদীতে আর ইলিশ বাড়ানো সম্ভব নয়। এজন্য যেখান থেকে ৬০ ভাগ ইলিশ মাছ আসে সেই সাগরের ওপরেই নির্ভরশীল হতে হবে। কারন হিসেবে তারা জানিয়েছেন-জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সংকট, ডুবোচর ও নাব্য সংকটের কারনে নদীতে সব মাছের উৎপাদন কমেছে।
বরিশাল নগরীর পোর্টরোডের ইলিশ মোকামের আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, এবছর ইলিশের আমদানী একেবারেই কম। শনিবার দেড়শ’ মনের মতো ইলিশ মোকামে উঠেছে। এর আগের দিন ছিল আড়াইশ’ মন।
তিনি আরও বলেন-গতছরের চেয়ে এবার ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় দাম অনেক বেশি। শনিবার এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ টাকা। একইভাবে এলসি সাইজের (৭০০-৯০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতিকেজি ১ হাজার ৯০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে।
একাধিক ইলিশ ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবছর ইলিশের দাম পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকা কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে নদী তীরের জেলেরা ইলিশ নিয়ে আরও বেশি হতাশ।
পোর্ট রোডের মোকামে বসে মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া এলাকার মেঘনা নদী তীরের জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন-নদীতে ইলিশ এখন কিছুটা মিলতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে আগামী মাসের ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। তাতে দাদনের টাকা মেটানো সম্ভব হবেনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলার এক মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন-নদীতে অসংখ্য ডুবোচর, আবহাওয়া পরিবর্তন. পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জাটকা রক্ষায় ব্যার্থতার কারনে ইলিশের আহরন কমে আসছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন-জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় শত চেস্টার পরেও সফলতা আসছে না। এর কারন আমরা সাগরে ইলিশ রক্ষা এবং আহরনে ব্যার্থ। ট্রলিং বোট, সাগরের মুখে জাল, বিদেশী বোট এবং বাণিজ্যিক ট্রলার নিয়ন্ত্রন করতে না পারার কারনে ইলিশ উৎপাদন গতবছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন কমে গেছে। এবারও ইলিশের উৎপাদন কমবে বলেও তিনি মনে করছেন।
জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সংকট, ডুবোচর, নাব্য সংকটের কারনে নদীতে সব মাছের উৎপাদন কমছে উল্লেখ করে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সাগর থেকে আমাদের মোট মাছের ৬০ ভাগ আসে। বাকি ৪০ ভাগ নদীসহ অন্যসব উৎসহ থেকে। তাই নদীর এই ৪০ ভাগ মাছ রক্ষা করে ভাল ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এবছর ইলিশের আহরন দৃশ্যমান না বাড়ার কারণে দামও কমেনি।