বর্ষার মৌসুম যেমন প্রকৃতির জন্য আনন্দের, তেমনই এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নানা ঝুঁকি তৈরি করে। তবে হঠাৎ করে তীব্র আর্দ্রতা, ভেজা রাস্তা, এবং অপরিষ্কার পরিবেশের কারণে বিশেষত ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা রক্ত সঞ্চালন দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য পায়ের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিপজ্জনক। এক অন্যতম ভয়ংকর সমস্যা হলো পায়ের গ্যাংগ্রিন, যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এমনকি অ্যাম্পিউটেশন পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। সুরানা সেথিয়া হাসপাতালে চেম্বুরে ভাসকুলার সার্জন এবং ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট ডা. আশঙ্ক বসাল এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
গ্যাংগ্রিন কী ও কেন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বর্ষায়: গ্যাংগ্রিন নিয়ে ডা. আশঙ্ক বসাল জানান, গ্যাংগ্রিন হল শরীরের টিস্যু মারা যাওয়ার অবস্থা, যা হতে পারে রক্তপ্রবাহের ঘাটতি বা গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে। এটি মূলত পায়ের আঙ্গুল, পা বা টোতে দেখা যায়। বর্ষার আর্দ্র ও ময়লা পরিবেশ সংক্রমণ বৃদ্ধি করে, বিশেষত ডায়াবেটিসে ভুগছেন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। ভিজে মোজা, অসতর্ক পরিচর্যা বা ক্ষত স্থানে সংক্রমণ দ্রুত গ্যাংগ্রিনের দিকে ধাবিত করতে পারে।
ঝুঁকি ও কারণগুলো: ডা. বসাল মূলত কয়েকটি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছেন:
নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস: রক্তে উচ্চ শর্করা থাকলে সংক্রমণ ও ক্ষত নিরাময় ধীর হয়।
দুর্বল রক্ত চলাচল: রক্ত সঠিকভাবে পৌঁছায় না, তাই টিস্যু মৃত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
খোলা ক্ষত বা আলসার: সংক্রমণের প্রবেশদ্বার।
ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: আর্দ্র আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ভিজে জুতো বা মোজা: বিশেষ করে ডায়াবেটিসে খুবই বিপজ্জনক।
দুর্বল ইমিউন সিস্টেম: সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমে যায়।
লক্ষণগুলো যা উপেক্ষা করা উচিত নয়
পা বা আঙুলে তীব্র ব্যথা বা অনুভূতি কমে যাওয়া;
ত্বকের কালচে, নীল বা সবুজ রঙে পরিবর্তন;
দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা পুঁজ;
জ্বর ও ফোলা;
আক্রান্ত স্থানের ত্বক ঠান্ডা বা ফ্যাকাশে।
এই সব লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সম্ভাব্য জটিলতা: যদি গ্যাংগ্রিন চিকিৎসা না পাই, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে:
সেপসিস (রক্তবাহিত সংক্রমণ), যা জীবনহানির কারণ হতে পারে
টিস্যুর স্থায়ী ক্ষতি
গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যাম্পিউটেশন প্রয়োজন হতে পারে জীবন রক্ষার জন্য
বর্ষায় পায়ের গ্যাংগ্রিন প্রতিরোধের টিপস: ডা. বসাল ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা দিয়েছেন:
১. পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন: ভিজে মোজা বা জুতো সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করুন।
২. প্রতিদিন পা পরীক্ষা করুন: কাটছাঁট, ফোসকা বা রং পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।
৩. খালি পায়ে হাঁটবেন না, ঘরেও সতর্ক থাকুন।
৪. ক্ষত বা সংক্রমণ দ্রুত চিকিৎসা করুন: সংক্রমণের লক্ষণ হলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান।
৫. রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন: নিয়মিত ডাক্তার দেখুন এবং ডায়াবেটিস ম্যানেজ করুন।
বর্ষার সময় পায়ের সঠিক পরিচর্যা ও সতর্কতা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস বা দুর্বল রক্ত চলাচলের সমস্যা থাকলে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার। ক্ষুদ্র লক্ষণও অবহেলা করলে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিয়মিত পরিচর্যা, সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া কেবল পায়ের সুস্থতা রক্ষা করে না, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বর্ষার মেঘলা দিনে আপনার পা আপনার স্বাস্থ্য সর্বাধিক যত্ন দাবি করে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস