Saturday, June 28, 2025

পুরো ইউক্রেনের দখল চান পুতিন

আরও পড়ুন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সম্পূর্ণ ভূখণ্ডকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চান তিনি। ২০২৫ সালের ২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমি বহুবার বলেছি—রুশ ও ইউক্রেনীয়রা এক জাতি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলছি, পুরো ইউক্রেনই আমাদের।’

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, পুতিন আরও বলেন, ‘যেখানে রুশ সেনারা পা রাখে, সেই ভূখণ্ড রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি কেবল একটি সামরিক কৌশল নয়, এটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ন্যায্যতার ভিত্তিতেই আমরা দেখি।’

পুতিনের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনীয় উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা তার জবাবে বলেন, ‘রুশ সেনারা যেখানে যায়, সেখানেই তারা সঙ্গে নিয়ে আসে মৃত্যু, ধ্বংস এবং বিভীষিকা।’ তিনি রাশিয়ার এই আগ্রাসনকে ২১ শতকের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন।

আরও পড়ুনঃ  এমপি আনারের ৪ কেজি মাংস উদ্ধারের দাবি

এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় দাবি করেন, পুতিন এবার আর কোনো মুখোশ পরছেন না। তিনি শুধু ইউক্রেন নয়, বরং বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ, মলদোভা, দক্ষিণ ককেশাস এবং এমনকি কাজাখস্তানের দিকেও নজর দিয়েছেন।

জেলেনস্কির এই মন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি ন্যাটো দেশগুলোকেও নতুন করে সতর্ক করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জার্মানির সামরিক বাহিনীর একটি কৌশলগত প্রতিবেদনেও পুতিনের এই সম্প্রসারণবাদী মনোভাবকে ইউরোপীয় ভূখণ্ডের জন্য এক ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ক্রমাগতভাবে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা সহায়তা বন্ধ না হলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিমা জোটের প্রতিক্রিয়া ও সামরিক সহায়তা

পুতিনের এই ঘোষণার পর ইউরোপীয় দেশগুলো এবং কানাডা ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ন্যাটোর নবনিযুক্ত মহাসচিব মার্ক রুটে এক বিবৃতিতে জানান, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই ইউরোপ ও কানাডা মিলে ইউক্রেনকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গোলাবারুদ, ড্রোন প্রযুক্তি এবং উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ‘এই সহযোগিতা প্রমাণ করে—আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আছি এবং রাশিয়ার আগ্রাসন কখনো মেনে নেব না।’

আরও পড়ুনঃ  এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন-তারিখ ঘোষণা

এই সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িক অনীহার কারণে তৈরি ঘাটতি পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলায় সামরিক সহায়তা অনেকটা আটকে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখনো পর্যন্ত বড় কোনো সামরিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেনি।

তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি। তবে এই মুহূর্তে এই সরঞ্জামগুলোর চাহিদা অনেক বেশি, এবং ইসরায়েলকেও সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনঃ  সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির ১১ সদস্য গ্রেপ্তার, পরিচয় জানলে চমকে যাবেন

ক্রেমলিনের হুমকি: অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না হলে যুদ্ধবিরতি নয়

এদিকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করে, তাহলে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, ‘যারা যুদ্ধ থামাতে চায়, তাদের উচিত ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করা। কিয়েভকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা শান্তির পথে অন্তরায়।’

রাশিয়ার এমন অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের বর্তমান ধারা ইঙ্গিত দেয় যে, এটি কেবল ইউক্রেন সীমাবদ্ধ থাকবে না—এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে ইউরোপের আরও বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ