Wednesday, October 8, 2025

৩ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস লুকিয়ে আছে ‘@’ চিহ্নে

আরও পড়ুন

বিশ্বজুড়ে আমরা আজ যাকে ‘@’ চিহ্ন বলে চিনি, সেটি শুধু ইমেইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার নয় বরং এই ছোট্ট বাঁকানো অক্ষরের ভেতর লুকিয়ে আছে তিন হাজার বছরেরও পুরনো এক ইতিহাস।

তাইওয়ানে একে বলা হয় ‘লিটল মাউস’, রাশিয়ায় ‘কুকুর’, হিব্রুতে ‘স্ট্রুডেল’, আবার ডাচ ভাষায় ‘বানরের লেজ’। প্রতিটি ভাষা ও সংস্কৃতিতে এই প্রতীককে ভিন্নভাবে দেখা হলেও, এর গল্প শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসে।

নইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন গ্রিকরা অ্যামফোরা নামে এক ধরনের মাটির হাঁড়িতে শস্য, জলপাই তেল ও মদ সংরক্ষণ করত। সময়ের সঙ্গে ‘অ্যামফোরা’ হয়ে ওঠে একটি পরিমাপের একক। ব্যবসায়ীরা বারবার লিখতে গিয়ে “a”-এর সঙ্গে লেজ টেনে সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করতে শুরু করে, যা আজকের ‘@’-এর পূর্বসূরি।

আরও পড়ুনঃ  সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ভেনেজুয়েলায় গ্রেপ্তার ৮৬ জন তরুণ-তরুণী কারাগার থেকে মুক্তি

১৫৩৬ সালে সেভিয়া থেকে রোমে পাঠানো এক ব্যবসায়ী ফ্রান্সিসকো লাপির চিঠিতে মদের মূল্য বোঝাতে ‘@’ ব্যবহার করা হয়। এটিই আধুনিক অর্থে ব্যবহৃত প্রথম দৃষ্টান্ত। তবে আরও আগে, ১৩৭৫ সালের এক বুলগেরিয়ান পাণ্ডুলিপিতেও এই প্রতীক পাওয়া যায় যদিও তখন সেটির কোনো নির্দিষ্ট অর্থ ছিল না।

অ্যামফোরার ব্যবহার হারিয়ে গেলেও প্রতীকটি থেকে যায় হিসাবরক্ষক ও রেকর্ডকিপারদের কাছে। ১৯শ শতকে টাইপরাইটার জনপ্রিয় হলে ‘@’ আরও প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যবসায়িক ও আর্থিক নথিতে এটি এত জরুরি হয়ে ওঠে যে প্রতিটি টাইপরাইটারেই স্থান পায়।

আরও পড়ুনঃ  সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু, এলাকায় রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক

১৯৭১ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী রে টমলিনসন যখন প্রথম ইমেইল পাঠানোর কোড লিখছিলেন, তখন তাকে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর নাম ও সার্ভার আলাদা করার জন্য একটি প্রতীক প্রয়োজন হয়। কীবোর্ডে চোখ রাখতেই ‘@’ চিহ্ন তার নজরে আসে। সেখান থেকেই শুরু হয় ডিজিটাল যুগে প্রতীকের বিপ্লব।

আজ ইতালিতে একে বলা হয় ‘চিওচোলা’ (শামুক), হিব্রুতে ‘স্ট্রুডেল’, চেকে ‘রোলমপস’ (এক ধরনের আচারযুক্ত মাছ), রাশিয়ায় ‘সোবাকা’ (কুকুর), আবার ডাচ ভাষায় প্রচলিত নাম ‘আপেনস্টার্টজে’ অর্থাৎ ‘বানরের লেজ’। ইংরেজিতে অবশ্য সরাসরি একে বলা হয় ‘at’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেট সংস্কৃতিতে @ প্রতীক আমাদের পরিচয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। এটি আমাদেরকে ইউজারনেম বেছে নিতে বাধ্য করেছে যা অনেক সময় বাস্তব জীবনের নাম থেকেও আলাদা হয়ে ওঠে। ভাষাবিদরা মনে করেন, অনলাইনে @-এর সঙ্গে যুক্ত ইউজারনেম পরিবর্তন করা অনেকটা বাস্তব জীবনে নিজের নাম বদলের মতোই গভীর আবেগময় সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুনঃ  'ভারত এখন বুঝেছে, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কেন দরকার'

২০১০ সালে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট (MoMA) এই প্রতীককে তাদের স্থায়ী সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে “Pirouette: Turning Points in Design” প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে এই প্রতীকটিকে। কিউরেটর পাওলা অ্যান্টোনেলি বলেন, “একটু ভিন্ন চোখে দেখলে বোঝা যায়, এই ছোট্ট প্রতীক আসলে হাজার বছরের মানব সভ্যতার গল্প বয়ে এনেছে।”

আপনার মতামত লিখুনঃ

জনপ্রিয় সংবাদ