বাংলাদেশের অনেক জমি মালিকানা জটিলতার মূল কারণ হলো খতিয়ানে ভুল। নামের বানান, দাগ বা অংশের ভুল, এমনকি প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের নামে খতিয়ান তৈরি—সবই ঘটছে। তবে আইন অনুযায়ী এসব সমস্যার সহজ ও নির্ভরযোগ্য সমাধান রয়েছে।
খতিয়ানে ভুল সংশোধনের জন্য প্রাথমিক ধাপ
২০২১ সালের ২৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় প্রকাশিত গেজেট (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩) অনুযায়ী, খতিয়ানে ভুল থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কাছে ‘মিস কেস’ আবেদন করতে হয়।
➡️ সাধারণ সাদা কাগজে আবেদন লিখতে হবে।
➡️ ২০ টাকার কোর্ট ফি জমা দিতে হবে।
➡️ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল ও পূর্বের খতিয়ান সংযুক্ত করতে হবে।
আইনের ভিত্তি:
State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (ধারা ১৪৩)
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ (ধারা ২৩(৩))
প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ান অন্যের নামে হলে কী করবেন
যদি কেউ প্রতারণার মাধ্যমে জমি নিজের নামে করে নেন:
এসিল্যান্ড বরাবর মিস কেস দিয়ে আবেদন করতে হবে।
যাচাই-বাছাই ও শুনানির পর প্রকৃত মালিকের নামে খতিয়ান ফেরত দেওয়া হয়।
আইন অনুসারে প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ২৩(৪) ধারা প্রযোজ্য।
খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে গেলে
থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।
জিডি কপি এবং ২০ টাকার কোর্ট ফি সহ এসিল্যান্ড অফিসে আবেদন করতে হবে।
প্রমাণ মেলে গেলে নতুন খতিয়ান ইস্যু করা হয়।
নতুন খতিয়ান সংগ্রহের ফি: ১০০ টাকা (ডিসিআর রশিদসহ)।
অন্যান্য জরিপ খতিয়ান হারালে করণীয়
S.A., C.S., R.S., B.S. খতিয়ান হারালে:
মৌজা নম্বর এবং খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে আবেদন করুন।
অনুলিপি সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রক্রিয়ার সময়সীমা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সাধারণত নামজারি সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩০–৪৫ দিন সময় লাগে।
আবেদন জমা হলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস প্রতিবেদন তৈরি করে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হয়। কোনো আপত্তি না থাকলে সংশোধিত খতিয়ান প্রদান করা হয়।
বাস্তব চ্যালেঞ্জ
অনেক সময় অফিসে অনীহা দেখা যায় এবং মানুষকে আদালতের দ্বারস্থ হতে বলা হয়। ভুক্তভোগীরা আশা করছেন, সরকারের ঘোষিত সহজ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে ভূমি অফিসে বারবার যায়রানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।