Monday, April 7, 2025

আবারও নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, জাহাজের স্থান বদল

আরও পড়ুন

আগের অবস্থান থেকে আরো ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাহাজটি নোঙর করার কথা জানা গেছে

চার দিন ধরে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ বাংলাদেশি ২৩ নাবিক জিম্মি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ আবার বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জিম্মিকারীদের পক্ষ থেকে এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি। বাংলাদেশি ২৩ নাবিক কী অবস্থায় রয়েছেন, তা জানা যাচ্ছে না।

এতে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখায় জলদস্যুদের কাছ থেকে কী বার্তা আসে, সবাই এখন সেই অপেক্ষায়।

সশস্ত্র জলদস্যুরা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছিল। গতকাল শুক্রবার আবার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।

আগের অবস্থান থেকে আরো ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাহাজটি নোঙর করার কথা জানা গেছে।

জাহাজটির স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাহাজটি আগের অবস্থান থেকে স্থান পরিবর্তন করেছে। মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানান, সোমালিয়ার স্থানীয় সরকারের নির্দেশক্রমে এমভি আবদুল্লাহ গতকাল সকাল ১১টায় নোঙর তুলে স্থান পরিবর্তন করেছে।

আরও পড়ুনঃ  'দস্যুরা এখনো কোনো মু‌ক্তিপন চায়‌নি, সব মি‌ডিয়ার সৃ‌ষ্টি'

বিকেল ৪টার দিকে আগের অবস্থান থেকে ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে গিয়ে নোঙর করেছে সেটি। তিনি বলেন, জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান এবং একে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিরাপত্তা প্রহরী বসানো হয়েছে।

জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না, জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকদের উদ্ধারে আমরা নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি আমরাও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। সমন্বিত চেষ্টা চলছে।

জানা যায়, জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হলেও বর্তমানে নাবিকদের ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে জলদস্যুরা।

এদিকে নাবিকদের দিনের বেলায় পরিবারের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে বলে জানা গেলেও পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

আরও পড়ুনঃ  জলদস্যুরা এখনো মুক্তিপণ চায়নি, জানালেন জাহাজের ক্যাপ্টেন

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে নাবিকদের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাঁদের জিম্মি করে রাখা সশস্ত্র জলদস্যুরা যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে। ওদের (জলদস্যু) সঙ্গে যোগাযোগের কোনো পথ নেই। ওরা যদি যোগাযোগ করে, তাহলে নাবিকদের উদ্ধার নিয়ে আলোচনার পথ সৃষ্টি হবে। জিম্মিকারীদের যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি।

তিনি বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে তারা (জলদস্যুরা) এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরির চেষ্টা করতে পারে। মুক্তিপণ আদায়ই জিম্মিকারীদের লক্ষ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা যোগাযোগ করলে উদ্ধারপ্রক্রিয়া দ্রুত করা যেত।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালি জলদুস্যদের নিয়ন্ত্রণে যায়।

জিম্মি নাবিকদের একাধিক অডিও বার্তাসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাহাজটি সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূলে থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করার পর ১৯ জনের একটি নতুন দল জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা এখন বাংলাদেশি ২৩ নাবিককে জিম্মি করে রেখেছে। জাহাজটি ছিনতাই করার সময় গত মঙ্গলবার তাদের যে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র দল ছিল, তারা নোঙর করার পর সেখান থেকে চলে গেছে। জলদস্যুদের প্রথম দলটি অনেকটা হালকা অস্ত্র বহন করছিল। এখন যারা জিম্মি করে রেখেছে, তাদের সবার হাতে ভারী অস্ত্র।

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদল্লাহ জলদস্যুর কবলে পড়ে। জিম্মিদশা থেকে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান তাঁর ভাই আবদুল্লাহ খান আসিফের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে একটি অডিও বার্তা পাঠান এবং একই দিন সন্ধ্যায় জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ তাঁর পরিবার এবং জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন বলে মিজানুল ইসলাম জানান।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ