Saturday, September 6, 2025

মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কেন পাকিস্তানের ‘শক্তিশালী’ সেনাপ্রধানদের পছন্দ করেন

আরও পড়ুন

১৯৫৯ সালের কয়েক বছর আগে। পাকিস্তান তখন এক সেনা শাসনের অধীনে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতায় আসেন এক জেনারেল। পরে তাঁর পদবি হয় ফিল্ড মার্শাল। সেনাবাহিনীতে এটি ছিল সর্বোচ্চ পদমর্যাদা।

এই ফিল্ড মার্শালের নাম ছিল আইয়ুব খান। পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসার পেছনে তাঁর প্রধান যুক্তি ছিল, তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মূলত, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুবের প্রয়োজন ছিল আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতা। যাতে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। পাশপাশি সেনাবাহিনীতে নিজের আমেরিকান ঘনিষ্ঠতা দেখানোর বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

কিন্তু বন্ধুত্বের বিনিময়ে লিন্ডন জনসন কী চেয়েছিলেন? জনসন আসলে চেয়েছিলেন, স্নায়ু যুদ্ধের ভূ-কৌশলগত সম্পর্ক। যেটির ওপর ভর করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর গুপ্তচরবৃত্তিমূলক কর্মকাণ্ড চালানো।

আইয়ুব খানের শাসনামলের বহু বছর পর, পাকিস্তান দ্বিতীয় ফিল্ড মার্শাল পেয়েছে। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর সেনাবাহিনীর জেনারেল অসিম মুনির ফিল্ড মার্শালের পদমর্যাদা পেয়েছেন। অসিম মুনির সামরিক অভ্যুত্থান করেননি। সে বিবেচনায় তিনিই প্রথম পাকিস্তানি সেনাপ্রধান যিনি হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে দুপুরের খাবার খাওয়ার দাওয়াত পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মানিত বোধ করার কথা বলেছেন। পাকিস্তানও নোবেল পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলা*দেশে ফিরছেন মে*জর ডালিম!

পাকিস্তানে গণতন্ত্রের সব উপাদানই আছে। সংসদ, প্রধানমন্ত্রী, বিচারবিভাগ, গণমাধ্যম সবাই আছে। কিন্তু দুই বছর আগে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানোর পর সেনাবাহিনীই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্য কারও প্রতি মনোযোগ না দিয়ে এমন ব্যক্তির দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যিনি গুরুত্ববহন করেন।

যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকদের প্রতি সদয় মনোভাব দেখিয়েছে। কারণ, সামরিক স্বৈরশাসকদের সঙ্গে গোপন বা অতি-গোপনীয় কৌশলগত পরিকল্পনা করাটাই বেশি উপযুক্ত। যেমন, ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের সরকারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। বিনিময়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের হঠাতে কাজ করেছিলেন জিয়াউল। ১৯৯০ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নেন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। তখন এ নিয়ে বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে।

আরও পড়ুনঃ  আদালত প্রাঙ্গণে আবেদ বললেন, ‘শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি বিয়ে করতে’

কিন্তু ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হলে প্রয়োজন পড়ে মুশাররফের। আফগানিস্তানে অভিযান চালাতে তৎকালীন বুশ প্রশাসন মুশাররফের সহযোগিতা চায়। যদিও পরে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন মুশাররফ। বলেছিলেন, সহযোগিতা না করলে এক মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পাকিস্তানে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় একজন জেনারেল কী করতে পারেন? তাই আফগানিস্তানে তালেবানের আস্তানায় হামলা চালাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করার পূর্ণ অনুমতি দেন।

পরে দেখা যায়, মার্কিন প্রশাসন জেনারেল মুশাররফকে বেশ ভালোভাবেই নিজেদের কাজে ব্যবহার করেছে। মুশাররফ তালেবানের অনেক নেতাকে ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানি নিরীহ নাগরিকদেরও হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিজের প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর অতটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। বরং কিছু বিষয়কে তিনি প্রতারণামূলক উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। আগে ‘যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ’ ইস্যুতে সহযোগিতার যে সম্পর্ক ছিল সেটি ফিরে এসেছে। গত বছর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক আফগান নাগরিককে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে। ওই আফগানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি কাবুল বিমানবন্দরে হামলার জন্য দায়ী। ওই হামলায় ২০০ আফগান ও বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক নিহত হন। ফলাফল, জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণেই ট্রাম্প পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুনঃ  ‘জনগণের উপর গুলি চালাব না’ সেনাবাহিনীর এমন সিদ্ধান্তে হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়: রয়টার্স

এমন প্রেমময় সম্পর্ক আগেও ছিল। কিন্তু এর শেষটা ভালো হয়নি। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গেছে- বহু আফগান নাগরিক মার্কিন বিমানে ঝুলতে ঝুলতে নিচে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতার দুই দশকে ৭০ হাজারের বেশি পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন। আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন? বলা চলে উল্লেখযোগ কিছুই হয়নি। কয়েক মাস পরপরই পাকিস্তানকে নিজেদের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে।

টাইম সাময়িকীতে লেখাটি প্রকাশ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। লিখেছেন, পাকিস্তানের সাহিত্যিক মোহাম্মদ হানিফ। সংক্ষেপে অনুবাদ

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ