Sunday, August 17, 2025

মর্টার আর রকেট বৃষ্টি ,যৌথ হামলায় লণ্ডভণ্ড ইসরাইলি হেডকোয়ার্টার

আরও পড়ুন

শনিবার সকালে গাজার আকাশজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, ভাঙা কংক্রিটের উড়ন্ত টুকরো আর বিস্ফোরণের শব্দে যেন যুদ্ধক্ষেত্র নতুন মাত্রা পায়। ঠিক এমন সময় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী একযোগে গাজা উপত্যকার নানা স্থানে ইসরাইলি দখলদার সেনাদের কমান্ড সেন্টারে আঘাত হেনেছে।

এই সমন্বিত অভিযানের নেতৃত্ব দেয় হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড এবং ইসলামিক জিহাদের আল কুদস ব্রিগেড। তাদের সঙ্গে মাঠে নামে ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের ওমর আল কাসেম ফোর্স এবং আল আকসা শহীদ ব্রিগেড। মর্টারশেল, ক্ষেপণাস্ত্র ও স্বল্পপাল্লার অস্ত্র দিয়ে সাজানো এই অভিযানের সমন্বয় যেন এক অদৃশ্য কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে আদালত কমপ্লেক্সের কাছে ইসরাইলি কমান্ড সেন্টারে মর্টারশেলের বৃষ্টি ঝরায় আল কাসাম যোদ্ধারা। খান ইউনিসের আকাশ মুহূর্তেই ধোঁয়া ও আগুনের শিখায় ভরে ওঠে। কিছুক্ষণ পর রাফার দক্ষিণে সালাউদ্দিন সড়কের ধারে আরেকটি কমান্ড পোস্টেও আঘাত হানে তাদের আরেক ইউনিট। প্রতিরোধ বাহিনী দাবি করেছে এই হামলায় ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুনঃ  এক ছাগলেই ওলট-পালট করে দিলো লাকি-মতিউর এর সংসার

একই সময়ে আল কুদস ব্রিগেড গাজার দক্ষিণের আল জাইতুন এলাকার আল বারাসি অঞ্চলে ইসরাইলি একটি কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টারে মর্টারশেল হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টানা তিন দফা বিস্ফোরণে আশপাশ কেঁপে ওঠে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া আল বালাদে অভিযান চালায় ওমর আল কাসেম ফোর্স। তাদের দাবি, ইসরাইলি সেনারা স্থানীয় ঘরবাড়ি ধ্বংস করতে যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল তা তারা দখল করেছে। এই বিস্ফোরক ভবিষ্যতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে নতুন অস্ত্র হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

অন্যদিকে আল আকসা শহীদ ব্রিগেড একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় তারা দক্ষিণ ইসরাইলের মিফতাহিম বসতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। ভিডিওতে বিস্ফোরণের মুহূর্ত ধরা পড়ে।

আরও পড়ুনঃ  আলটিমেটামেও কাজে যোগ দেননি কিছু পুলিশ কর্মকর্তা

এই ধারাবাহিক হামলার আলোচনায় উঠে আসে শুক্রবার রাতের ঘটনাও। সেদিন গাজার আল জাইতুন মহল্লার আল মুসাল্লাবা এলাকায় এক মেরকাভা ট্যাংককে আল ইয়াসিন রকেট দিয়ে আঘাত করে আল কাসাম যোদ্ধারা। একই এলাকায় ইসরাইলি বাহিনী যেসব ঘরবাড়ি দখল করে বাংকার বানিয়েছিল, সেসব ঘরে টিভিজি সেল নিক্ষেপ করা হয়। আরো দুইটি সাজোয়া যান ভেতর থেকে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়।

শুক্রবার ভোরে স্ট্রিট আর্ট এলাকায় একটি মেরকাভা-৪ ট্যাংক ও একটি ডি-৯ বুলডোজারকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় আল কাসাম। ইয়াসিন রকেটের আঘাতে মুহূর্তেই উড়ে যায় যানগুলো।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর দাবি, এইসব অভিযানে বহু ইসরাইলি সেনা নিহত ও আহত হয়েছে। বিশেষ করে আল জাইতুন এলাকায় সেনারা যখন সাধারণ মানুষের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন হঠাৎ স্নাইপার হামলা ও শেল বিস্ফোরণে তাদের বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়। যদিও ইসরাইলি বাহিনী এসব হামলার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু স্বীকার করেনি, তবে গাজার বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া ভিডিও ও স্থানীয় সূত্র বলছে দখলদার সেনারা কঠিন আঘাতের মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ফেনীতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালান ৩৩ অস্ত্রধারী

প্রতিরোধ শিবিরগুলোর ভাষায়, এই অভিযানগুলো শুধু আক্রমণ নয়, বরং এক ধরনের বার্তা। গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের যোদ্ধারা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দখলদারদের ট্যাংক, সাজোয়া যান কিংবা আধুনিক প্রযুক্তি—কোন কিছুই তাদের লড়াইয়ের স্পৃহা ভাঙতে পারছে না।

গাজার মানুষের কাছে এই লড়াই শুধু প্রতিরোধ নয়, বরং টিকে থাকার সংগ্রাম। প্রতিটি বিস্ফোরণ, প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র, প্রতিটি মর্টারশেল যেন বলছে—গাজা এখনো হার মানেনি, আর প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না দখলদার সেনারা ভূমি ছেড়ে যায়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ