গত জুনে ইসরাইলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে খুব কমই প্রকাশ্যে দেখা গেছে। এই অনুপস্থিতির কারণে খামেনির বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। কারণ খামেনির বয়স এখন ৮৬ বছর। এই বয়সেও ইরানের মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি একটি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তাই খামেনির পর কে হবেন ইরানের পরবর্তী শাসক—এ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ আগে থেকেই। খামেনির উত্তরসূরির নাম জানতে মুখিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।
সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত হয়েছেন ১,০০০-এর বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা। যখন ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের বেসামরিক ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছিল, তখন খামেনি ছিলেন সুরক্ষিত এক বাংকারে। এরপরও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খামেনির অবস্থান জেনে যায় তারা। যুদ্ধে যদি কোনোভাবে সেই বাংকারে হামলা চালানো হতো, তবে ভয়াবহ বিপদে পড়তে পারতো ইরান। নেতৃত্বশূন্য ইরানের যুদ্ধ করার মনোবল হারিয়ে যেত।
এছাড়াও, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এখনো ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের রেষারেষি চলছে, যেখানে খামেনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যদিও এই সংকট শুরু হওয়ার আগেই নিজের উত্তরসূরি নির্ধারণ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন খামেনি, তবে কার নাম বিবেচনায় রয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। শোনা যাচ্ছে, তার ছেলে মুজতাবা খামেনির নাম তালিকায় নেই; বরং তার ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্রকেই উত্তরসূরি বানাতে চান তিনি।
খামেনি এখন বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতাসীন নেতাদের একজন। একসময় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো তাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিভিন্ন মহলেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। যদিও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনুগত অংশ এখনো খামেনিকে সমর্থন জানিয়ে আসছে, কিন্তু অনেকেই আবার বলছে, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে খামেনির কিছু কৌশলগত ভুল ইরানের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। অনেকের মতে, খামেনির বয়স রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি এই ধরনের মন্তব্য করেছেন খামেনির ব্যক্তিগত উপদেষ্টা আলী আকবর ভেলায়েতিও।
ইরানি গণমাধ্যম ই ওয়ার্ল্ড ভিউ এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই অবস্থায় খামেনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা—
১. ক্ষমতায় থেকে ধীরে ধীরে দায়িত্ব হস্তান্তর করে সীমিতভাবে রাষ্ট্রীয় সংস্কার চালু করা।
২. আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করে নতুন কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ও সংস্কারপন্থীরা ইরানের রাজনীতিতে একটি জায়গা তৈরি করতে পারবে। তবে বাস্তবতা হলো—ইরানে খামেনির প্রতি এখনো একটি বড় ও শক্তিশালী রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে।