ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি দেশ তার সমগ্র জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করতে বাধ্য হতে পারে এবং এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপ দেশ টুভালু, যেখানে মাত্র প্রায় ১১ হাজার মানুষ বাস করে, ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। নাসার Sea Level Change Team-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে টুভালুর আশেপাশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ দেশটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্থানান্তর চুক্তি, সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রকল্প এবং বিলুপ্তির মুখে থাকা রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বৈশ্বিক আবেদন। টুভালুতে মোট ৯টি ছোট প্রবাল অ্যাটল ও দ্বীপ রয়েছে, যার আয়তন মাত্র ২৬ বর্গকিলোমিটার, যা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর একটি। দেশের গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২ মিটার, ফলে সামান্য উচ্চতা বৃদ্ধিতেই মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে। বর্তমানে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো ঝুঁকি (সড়ক, বাড়ি ও বিমানবন্দর প্লাবনের শিকার), পানি সংকট (লবণাক্ত পানির কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ), এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় (আবহাওয়া ও সমুদ্রের পরিবর্তনের কারণে মাছ ধরা ও কৃষি হুমকির মুখে)।
নাসার তথ্য বলছে, ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং গত তিন দশকে এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়েছে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক কারণ যেমন এল নিনো প্রভাব এবং সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তনের কারণে টুভালুর আশেপাশে এই বৃদ্ধি আরও বেশি, প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে ২০২২ সালে টুভালু বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল দেশ হওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্বীপগুলোর ভার্চুয়াল রেপ্লিকা তৈরি, সাংস্কৃতিক স্থাপনা ডিজিটালি সংরক্ষণ, এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সমুদ্রসীমা ও নাগরিকত্ব রেকর্ড রাখা হবে, যাতে দেশটির সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্ব অন্তত ভার্চুয়ালি টিকে থাকে।