অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। তিনি বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব।
আব্দুস সাত্তার বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ এবং বদলির ক্ষেত্রে এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া হয় না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এই দাবি করেন। সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আব্দুস সাত্তার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ আমি দিতে পারব।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এসব দুর্নীতির প্রমাণ থাকলেও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাঁর কথায় সমর্থন জানান এবং করতালি দেন।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে অনভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
সাবেক এই সচিব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতি না কমে বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি স্কুলের নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছেন এবং ঢাকার আশপাশের একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একটি কারখানার লে-আউট অনুমোদনের জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
আব্দুস সাত্তার বলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বসেন এবং গত ৫ আগস্টের পর থেকে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে ভিড় করছেন। তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি অফিসে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন যে, ‘কোনো কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে আসতে পারবেন না। যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তারা যেন অফিসার্স ক্লাবে যোগাযোগ করেন।’
সেমিনারে উপস্থিত সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, আব্দুস সাত্তার একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তিনি এমন কথা বলবেন না। তাঁর এই অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ওই আটজন উপদেষ্টাকে চিহ্নিত করা উচিত।
সেমিনারে অন্য বক্তাদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান কর্মকর্তাদের সাহসের অভাব নিয়ে কথা বলেন এবং আইনের প্রয়োগের ওপর জোর দেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় রাজনীতিবিদেরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভঙ্গুর করে দিয়েছেন এবং এখন প্রশাসনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার পথ খুঁজে বের করতে হবে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত কয়েকজন শহীদের পরিবারের সদস্য এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।