Monday, December 23, 2024

জিয়াউলসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

আরও পড়ুন

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউল আহসানসহ আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

৮ কর্মকর্তা হলেন- সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গত ২৭ অক্টোবর কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) জারি করা হয়। আজ ৮ জনকে হাজির করা হয়েছে। এই ৮ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই।

প্রথমে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ও পতনের পর আইজিপি ছিলেন এ আসামি। তার নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ও এর বিভিন্ন সংস্থা জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে। অপরাধ সংগঠনের প্রধান হোতা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার নেতৃত্বে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয় সারাদেশে সুপিরিয়র অবস্থানে এ আসামি। আন্দোলনের সময় তার অধীনে একজন ব্যতীত বাকীরা কাজ করে। তারা বেপরোয়া হায়েনা ছিল। গণহত্যার সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন মামুন। তার নির্দেশে, পরিকল্পনায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। তাই এ গণহত্যার দায় তার ওপর বর্তায়।

পরে জিয়াউল আহসানের বিষয়ে বলেন, তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ১৯৯১ সালে কমিশন্ড পদে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে উপ-অধিনায়ক হন। র‌্যাবে চাকরি করেন। গুম-খুনের সঙ্গে তিনি জড়িত। এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক ছিলেন। সরকার বিরোধীদের শায়েস্তা করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধে তার ভূমিকা ছিল। দেশে গুমের ঘটনা তার হাত ধরে। তার দ্বারা অসংখ্য ব্যক্তি গুমের শিকার হন। এখনো কয়েকজন গুম রয়েছে। গুমের নেপথ্যের কারিগরও তিনি।

আরও পড়ুনঃ  রাজধানীর তেজগাঁওয়ে যমুনা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ বিরোধীদের গুম করতেন তিনি। বহাল তবিয়তে চাকরি করতেন। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারতো না। ফ্যাসিস্ট সরকার তার কাছ থেকে সুবিধা নিতো। আর সেও দাপটের সাথে চাকরি করত। আন্দোলনের সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে। সরকার পতনের পর অবশ্য তা ডিলিট করেছে। আয়নাঘর, বন্দিদশা তৈরি তার হাতে।

তার দ্বারা অসংখ্য ব্যক্তি গুমের শিকার হন। এখনো কয়েকজন গুম রয়েছে। গুমের নেপথ্যের কারিগরও তিনি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ বিরোধীদের গুম করতেন তিনি। বহাল তবিয়তে চাকরি করতেন। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারতো না। ফ্যাসিস্ট সরকার তার কাছ থেকে সুবিধা নিতো। আর সেও দাপটের সাথে চাকরি করত।

আন্দোলনের সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে। সরকার পতনের পর অবশ্য তা ডিলিট করেছে। আয়নাঘর, বন্দিদশা তৈরি তার হাতে। ফ্যাসিস্ট সরকারের হুমকিদাতাদের ধরে এনে আয়নাঘর, বন্দিদশায় রাখা হতো। ২০২২ সাল থেকে এনটিএমসির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে কলরেকর্ড ফাঁস করতেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর আড়িপাতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দিনের পর দিন কলরেকর্ড ফাঁস করতেন। ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের হত্যায় তার ভূমিকা রয়েছে। তারা নাস্তি বাহিনীর চেয়ে ভয়ংকর।

জসিম উদ্দিনের বিষয়ে বলেন, তিনি মিরপুরের ডিসি ছিলেন। আন্দোলনের সময় মিরপুরে যত নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছে এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

আব্দুল্লাহ আল কাফির বিষয়ে বলেন, এসপি থাকাকালে প্রায় শতাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে। ইয়ামিন নামে এক যুবককে এপিসি থেকে গুলি করে। ইয়ামিন পানি খেতে চায় পানি দেয়। কিন্তু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। তিন ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেয়া হলে ইয়ামিন মারা যায়। তার লাশ দাফনে বাধা দেয়। পরে গোপনে তার লাশ দাফন করা হয়।

আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানার সামনে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। প্রথমে লাশগুলো রিকশাভ্যানে করে থানায় নেয়। পরে পুলিশ ভ্যানে তোলে। এরপর গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপাতে তারা এ নাটক করে। শাহিদুর ইসলামও আশুলিয়ার ওই ৬ লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত। ওসি মাজহারুল ইসলামও ওই নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের নেতৃত্বে এঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

এসময় আসামির ডকে বসে থাকা মাজহারুল ইসলাম দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কখনো সাভারের ওসি ছিলাম না। গুলশানের ওসি ছিলাম। এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। একথা বলে উচ্চস্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন বলে জানান। কোনো হত্যাকান্ড ঘটাননি বলেও দাবি করেন।

তখন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, নির্দোষ হলে আপনি ন্যায়বিচার পাবেন। পরে তাজুল ইসলাম সাভার এলাকার অভিযোগ তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে জানান।

আরাফাত হোসেনও ৬ লাশ পোড়ানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

এরপর তাজুল ইসলাম আবার ওসি মাজহারুলের বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, গুলশান এলাকায় আন্দোলনে গিয়ে আবির, নাইমুর রহমান, বাহাদুর হোসেন মানিক, সোহাগ, ওয়াসিম মারা যান। এসময় গুলশান থানার ওসি ছিলেন মাজহারুল ইসলাম। লীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তারা এসব হত্যাকান্ড চালায়।

আবুল হাসানের বিষয়ে বলেন, যাত্রাবাড়ি থানায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গোটা দুনিয়া তা দেখেছে। আবুল হাসানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে অধীনস্তরা হত্যাকান্ড চালায়। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। দিনের পর দিন শত শত আন্দোলনকারীকে হত্যা করে।

আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে কয়েক হাজার মানুষকে আহত করে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। পরে তাদের ধরে নিয়ে টর্চার করে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দিয়ে সময়ক্ষেপন করে। সব অভিযোগ আবুল হাসানের বিরুদ্ধে। সেখানকার একটা ঘটনা থেকে আরেকটা ঘটনা বেশি নির্মম।

তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ৮ জনকে গ্রেপ্তার রাখারর আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় চান চিফ প্রসিকিউটর।

আরও পড়ুনঃ 

এ সময় আদালত জানতে চান, তদন্ত কতদূর পর্যন্ত। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, চেষ্টা করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার। কাঁচের মত স্বচ্ছ করে বিচার করতে চাই আমরা। প্রমাণ করবো তারা কি করেছে। তাদের প্রতি যেন কোনো অবিচার না হয়। আর ভূক্তভোগী পরিবার যেন ন্যায়বিচার পাই।

এরপর জিয়াউল আহসানের পক্ষে তার আইনজীবী নাজনীন নাহার একটি আবেদন করেন। তবে যথাযথ প্রসেস মেইনটেন না থাকায় প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এতে আপত্তি জানান। এ বিষয়ে আর শুনানি হয়নি।

পরে আদালত ৮ আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। আগামি ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে সময় বেঁধে দেন। ১২ টা ৫ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়।

ফ্যাসিস্ট সরকারের হুমকিদাতাদের ধরে এনে আয়নাঘর, বন্দিদশায় রাখা হতো। ২০২২ সাল থেকে এনটিএমসির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে কলরেকর্ড ফাঁস করতেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর আড়িপাতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দিনের পর দিন কলরেকর্ড ফাঁস করতেন। ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের হত্যায় তার ভূমিকা রয়েছে। তারা নাস্তি বাহিনীর চেয়ে ভয়ংকর।

জসিম উদ্দিনের বিষয়ে বলেন, তিনি মিরপুরের ডিসি ছিলেন। আন্দোলনের সময় মিরপুরে যত নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছে এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

আব্দুল্লাহ আল কাফির বিষয়ে বলেন, এসপি থাকাকালে প্রায় শতাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে। ইয়ামিন নামে এক যুবককে এপিসি থেকে গুলি করে। ইয়ামিন পানি খেতে চায় পানি দেয়। কিন্তু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। তিন ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেয়া হলে ইয়ামিন মারা যায়। তার লাশ দাফনে বাধা দেয়। পরে গোপনে তার লাশ দাফন করা হয়।

আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানার সামনে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। প্রথমে লাশগুলো রিকশাভ্যানে করে থানায় নেয়। পরে পুলিশ ভ্যানে তোলে। এরপর গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপাতে তারা এ নাটক করে। শাহিদুর ইসলামও আশুলিয়ার ওই ৬ লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত। ওসি মাজহারুল ইসলামও ওই নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের নেতৃত্বে এঘটনা ঘটে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ