নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার ৪ বছর বয়সী হোসেন নামের এক শিশুকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে শিশুটিকে তার বাবা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছিল বলে জানায় পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় শিশুটিকে উদ্ধারের বিষয়টি জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. শরীফুল ইসলাম। এর আগে শনিবার রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে এসময় শিশুটির বাবা সোহেল পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানায়, ২-৩ বছর আগে শিশুটির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর শিশুটিকে তার মা নিয়ে যান। কিন্তু শিশুটির বাবা কয়েক মাস পর জোরপূর্বক শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই শিশুটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন সোহেল। বাসা থেকে বের হলে তিনি শিশুটিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে চলে যেতেন। দিনের অধিকাংশ সময়ই শিশুটিকে অনাহারে থাকতে হতো। কান্না করলে তার ওপর চলতো নির্যাতন।
ওই এলাকারই স্থানীয় বাসিন্দ ব্যবসায়ী শাওন জানান, উদ্ধার হওয়া শিশুটির বাড়ির পাশেই তার দোকান। দুই থেকে তিন মাস আগে তিনি জানতে পারেন যে, চার বছর বয়সী এক শিশুকে তার বাবা সারাদিন ঘরে তালাবদ্ধ করে বাড়ির বাইরে বের হোন। পেটের ক্ষুধায় কান্না করলেও শিশুটিকে খাবার দেওয়া হতো না। কখনো কখনো শিশুটিকে জুস বা চিপস কিনে দিতো শিশুটির মাদকাসক্ত বাবা সোহেল। তবে অধিকাংশ সময় শিশুটিকে মারধর করা হতো।
গত দুদিন আগে এক দোকানে শিশুটিকেসহ তার বাবাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় এক নারী শিশুটির এই অবস্থা দেখতে পেয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে তাকেও মারধর করেন সোহেল। এ ঘটনা জানার পর তিনি ভালো করো খোঁজ নিয়ে শিশুটির ওপর নির্যাতনের বিষয়ে সত্যতা জানতে পারেন। পরবর্তীতে তিনি ‘অপরিচিতা’ নামের ঢাকার একটি সামাজিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেন। তখন তারা তাকে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবগত করতে বলেন। পরে শনিবার বিকেলে তিনি ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন।
ফতুল্লার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটির শরীরের একাধিক স্থানে ক্ষত রয়েছে। রোববার সকালে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা এসে শিশুটিকে নিয়ে যান।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজ কর্মী মোসাম্মৎ তাছলিমা আক্তার জানান, চিকিৎসা শেষে শিশুটির বয়স অনুযায়ী সরকারি ছোট মনি নিবাসে শিশুটিকে রাখা হবে। শিশুটি বর্তমানে খুবই অসুস্থ। পুষ্টিহীনতা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর ফলে তার চিকিৎসাটা এখন বেশি জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমা শিরিন সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। শিশুটি বর্তমানে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে রয়েছে। তার সুচিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।