পুরুষদের জন্য মারাত্মক এক স্বাস্থ্যঝুঁকি হলো প্রোস্টেট ক্যানসার, বিশেষ করে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জন পুরুষের মধ্যে প্রায় ১ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ ছাড়াই বিকাশ লাভ করে। ফলে অনেকে দেরিতে বুঝতে পারেন। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং—যেমন PSA ব্লাড টেস্ট এবং ডিজিটাল রেক্টাল এক্সাম (DRE)—জীবন রক্ষার বড় উপায়।
কেন প্রাথমিক লক্ষণ বোঝা কঠিন?
প্রোস্টেট গ্রন্থি মূত্রাশয়ের নিচে ও মূত্রনালীর চারপাশে অবস্থান করে। ক্যানসারের টিউমার সাধারণত বাইরের দিক থেকে শুরু হয়, যা শুরুতে মূত্রত্যাগে সমস্যা তৈরি করে না। তাই অনেক পুরুষ কোনো অস্বাভাবিকতা টের পান না। যখন উপসর্গ স্পষ্ট হয়, তখন ক্যানসার অনেকটা অগ্রসর হতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণ: যা খেয়াল রাখবেন
অনেক সময় পুরুষরা বয়সজনিত সমস্যা ভেবে উপসর্গ এড়িয়ে যান। কিন্তু এগুলো উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
মূত্রত্যাগে পরিবর্তন
প্রস্রাব শুরু বা বন্ধ করতে সমস্যা
দুর্বল বা ভাঙা-ভাঙা প্রবাহ
মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি
রাতে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন
ব্যথা বা জ্বালা
প্রস্রাব বা বীর্যপাতের সময় ব্যথা
রক্ত দেখা
প্রস্রাব বা বীর্যে রক্ত থাকা (অতি সামান্য হলেও)
হঠাৎ যৌন সমস্যা
ইরেকশন সমস্যা বা তা বজায় রাখতে না পারা
অজানা ব্যথা
কোমর, নিতম্ব, পেলভিস বা উরুতে স্থায়ী অস্বস্তি
দ্বিতীয় স্তরের সতর্কতা
বেদনাদায়ক বীর্যপাত
প্রস্রাবে হঠাৎ তাড়াহুড়োর অনুভূতি
বসার সময় পেলভিসে অস্বস্তি
নতুনভাবে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা
কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে?
বয়স: ৫০ বছরের পর ঝুঁকি বাড়ে
পারিবারিক ইতিহাস: বাবা বা ভাই আক্রান্ত থাকলে ঝুঁকি বেশি
স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন ঝুঁকি বাড়ায়
অন্য রোগ ভেবে ভুল করা যায়?
হ্যাঁ। প্রোস্টেট ক্যানসারের অনেক উপসর্গ সাধারণ প্রোস্টেট বড় হওয়া (BPH) বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর সঙ্গে মিলে যায়। তাই নিজে থেকে রোগ নির্ণয় না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
কেন আগে ধরা জরুরি?
প্রোস্টেট ক্যানসার ধীরে বৃদ্ধি পেলেও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকর হয়। তখন কম আক্রমণাত্মক চিকিৎসায়ই নিরাময় সম্ভব। কিন্তু দেরি হলে চিকিৎসা জটিল হয়ে ওঠে এবং সুস্থতার সম্ভাবনাও কমে যায়।
পুরুষদের করণীয়
নিয়মিত পরীক্ষা করান: ৫০ বছরের পর (বা ঝুঁকি বেশি হলে আগে) PSA টেস্ট ও DRE করুন।
উপসর্গ লিখে রাখুন: প্রস্রাবে পরিবর্তন, ব্যথা বা যৌন সমস্যা হলে নোট করুন।
জীবনযাত্রা বদলান: ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান: ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী প্রস্রাব বা পেলভিসের সমস্যা হলে অবহেলা করবেন না।
প্রোস্টেট ক্যানসার প্রায়ই নীরবে শুরু হয়। কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণ চিনতে পারা, নিয়মিত স্ক্রিনিং ও সচেতনতা—পুরুষদের জীবন বাঁচাতে পারে।