Saturday, August 23, 2025

খোলা চিঠিতে যা লিখেছেন বিভুরঞ্জন

আরও পড়ুন

ঢাকা থেকে প্রকাশিত আজকের পত্রিকা’য় সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের কলাম বা মতামত পাতায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন সিনিয়র সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার।

নিখোঁজ হওয়ার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (২১শে আগস্ট) সকাল নয়টায় নিজের একটি লেখা স্থানীয় গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন তিনি। যার ফুটনোটে উল্লেখ করেন, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।” ওইদিন সকাল ১০টা পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।

তার ওই লেখাটি ‘খোলা চিঠি’ নামে শুক্রবার প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। যেখানে নিজের ব্যক্তি ও কর্মজীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহ, পাওয়া-না পাওয়ার হতাশার কথা লিখেছেন। এমনকি অতীত এবং বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক নানা বাস্তবতা আর অভিযোগ উঠে এসেছে তার ওই লেখায়।

খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, বুয়েট থেকে পাস করা ছেলের চাকরি না হওয়া, মেডিকেল পাস মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের কথা। অর্থ সংকটের মধ্যেও সাংবাদিকতা নিয়ে নিজের অবস্থানের নানা দিক নিয়েও নিজের লেখায় আলোচনা করেছেন বিভুরঞ্জন।

তার এই লেখায় অতীত এবং বর্তমান সরকারের সময়ের নানা দিকও উঠে এসেছে।

“শেখ হাসিনার শাসনামলে নানা পরিচয়ে অনেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। একপর্যায়ে লাজলজ্জা ভুলে আমিও শেখ হাসিনার দরবারে সাহায্যের আবেদন করে কোনো ফল পাইনি। অনেক সাংবাদিক প্লট পেয়েছেন। আমি দুইবার আবেদন করেও সফল হইনি,” লিখেছেন মি. সরকার।

আরও পড়ুনঃ  বন্যা ষড়যন্ত্র কি না তদন্ত করবো : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

তিনিএ-ও লিখেছেন, “বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখেও নাকি কতজন ভাগ্য বদলেছেন। অথচ আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত দুটি বইয়ের জন্য আমি দুই টাকাও রয়্যালিটি পাইনি। একেই বলে কপাল!

“তবে হ্যাঁ, একবার শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। ওই সফরের জন্য কিছু হাত খরচের টাকা আমি পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা তো ওই কোট, প্যান্ট, জুতো কিনতেই শুধু শেষ হয়, আরও দেনা হয়েছে। ওই সুবাদে আমার কোট-টাই জুতা কেনা! সারাজীবন তো স্যান্ডেল পরেই কাটল।”

নিজের চাকরি জীবন নিয়েও আক্ষেপ করেছেন বিভুরঞ্জন। তিনি লিখেছেন, “শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে অবিচল অবস্থানের কারণে আমাকে আজও ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী আমলেও কোনো বাস্তব পুরস্কার পাইনি।”

“আজকের পত্রিকা’য় কাজ করছি ৪ বছর হলো। এই সময়ে না হলো পদোন্নতি, না বাড়ল বেতন। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে প্রতিদিন,” লেখেন মি. সরকার।

আরও পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফুট*বল খেলা*কে কেন্দ্র করে দুই গ্রাম*বাসীর সংঘর্ষ, আহত ১০

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মি. সরকার। তিনি লিখেছেন, “গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমের অবস্থা আরও কাহিল হয়েছে। মন খুলে সমালোচনা করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। কিন্তু তার প্রেস বিভাগ তো মনখোলা নয়। মিডিয়ার যারা নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন তারা সবাই আতঙ্কে থাকেন সব সময়। কখন না কোন খবর বা লেখার জন্য ফোন আসে।”

তার একটি লেখার জন্য ওই পত্রিকাটির অনলাইন বিভাগকে ‘লালচোখ’ দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মি. সরকার। এছাড়া পত্রিকার আরেকটি লেখা সরকারের চাপের কথাও বলেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিভুরঞ্জন সরকার তার শেষ লেখায় অভিযোগ করেছেন, “মাজহারুল ইসলাম বাবলার একটি লেখার জন্যও চোটপাট করা হয়েছে। আপত্তিকর কি লিখেছেন বাবলা? লিখেছেন, সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সামরিক হেলিকপ্টারে দিল্লি পাঠিয়েছে। আর শুধু পুলিশের গুলিতে নয়, মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে। এখানে অসত্য তথ্য কোথায়?”

তিনি আরও লিখেছেন, “শেখ হাসিনা কি হেলিকপ্টার ভাড়া করে গোপনে পালিয়েছেন? হাসিনার পুলিশ না হয় ছাত্র জনতাকে হত্যা করলো কিন্তু পুলিশ হত্যা করলো কে বা কারা? এইটুকু লেখার জন্য পত্রিকার বিরুদ্ধে তোপ দাগা একেবারেই অনুচিত।

আরও পড়ুনঃ  ঢাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মারা যেতে পারে ২ লাখ মানুষ

“সব মিলিয়ে পত্রিকায় আমার অবস্থা তাই খুবই নাজুক। সজ্জন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চাপ সইতে না পেরে আমার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করেছেন।”

সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনার পালানো, পুলিশের গুলি ও মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরাও মানুষ হত্যা করেছে’ এমন একটি লেখা নিজেদের পাতা থেকে প্রত্যাহার করার কথা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন আজকের পত্রিকার একাধিক সূত্র ।

নিজের জীবনের আর্থিক কষ্টের নানা দিকও তিনি তুলে ধরেছেন তার ওই চিঠিতে। তিনি লেখেন, নামে-বেনামে হাজার হাজার লেখা লিখেছি। সম্মানী কিন্তু পেয়েছি খুবই কম। কোনো কোনো পত্রিকা তো কয়েক বছর লেখার পরও একটা টাকা দেওয়ার গরজ বোধ করেনি।

১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া বিভুরঞ্জন সরকার লেখাপড়া করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের সাংবাদিকতা জীবনে দৈনিক আজাদ, দৈনিক মাতৃভূমি, সাপ্তাহিক চলতিপত্রের সম্পাদক, সাপ্তাহিকএকতা এবং সাপ্তাহিক মৃদুভাষণের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে ‘তারিখ ইব্রাহিম’ ছদ্মনামে লেখা তার রাজনৈতিক নিবন্ধ পাঠকপ্রিয় হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ