Wednesday, August 20, 2025

ভারতে যেভাবে সময় কাটছে পলাতক আ.লীগ নেতাদের

আরও পড়ুন

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তারা টাক মাথায় চুল লাগানো, জিমে ব্যায়াম করাসহ বিভিন্ন ভাবে সময় পার করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওইসব নেতাদের অনেকেই এখন কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় অবস্থান করছেন। সেখানে তারা বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন, কেউ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলাতক নেতারা সাধারণ মানুষের চোখে না পড়ার চেষ্টা করছেন। খুব একটা বাইরে বের হন না। বাসায় থেকেই তারা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। কেউ কেউ সময় দিচ্ছেন শরীর চর্চায়, আবার কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যস্ত। রান্নার কাজটিও মাঝে মাঝে নিজেদেরই করতে হচ্ছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকেই তাদের অবস্থান গোপন রাখছেন। তবে বেশিরভাগই থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউন এলাকায়। এলাকাটি বেছে নেয়ার পেছনে আছে কয়েকটি কারণ- প্রশস্ত রাস্তাঘাট, তুলনামূলক সাশ্রয়ী বাসাভাড়া, আধুনিক ফিটনেস সেন্টার, ভালো চিকিৎসা সুবিধা এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান।

দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারের একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

আরও পড়ুনঃ  হাসনাত-সারজিসকে ট্রাকচাপায় হ..ত্যার চেষ্টা

মোহাম্মদ এ আরাফাত দ্য প্রিন্টকে বলেছেন, এখন তার জীবনে কোনো নির্দিষ্ট ঘুম বা বিশ্রামের সময় নেই। প্রতিটি দিন শুধু কাজেই কেটে যাচ্ছে। তার ভাষায়, মাঝে মাঝে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের পার্থক্য বুঝে উঠতে পারি না।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা যায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে। সেই সময় কলকাতার নিক্কো পার্কে তাকে দেখা গেলে মুহূর্তেই খবরটি ভাইরাল হয়। সাধারণ মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে, কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করলেন, অথচ কেউ জানলো না।

এ নিয়ে দেশীয় প্রশাসন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম জানান, ইমিগ্রেশন রেকর্ডে কামালের বিদেশযাত্রার কোনো প্রমাণ নেই।

নিউ টাউনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্ট–কে জানান, কামাল এখন সেখানকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকছেন। তার দলীয় সহকর্মীরা নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দিল্লিতেও যান বৈঠকে অংশ নিতে এবং ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে। কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসসির খান জ্যোতি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন।

ওই সাবেক এমপি আরও বলেন, কামাল এখন দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার দায়িত্বে আছেন। নেতাদের বারবার বলছেন- তারা এখানে বিশ্রাম নিতে আসেননি, এসেছেন টিকে থাকতে ও ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য প্রস্তুত হতে।

আরও পড়ুনঃ  থানার ওয়াশ রুমে যেতেই রাসেলস ভাইপারের ছোবল, অতঃপর...

দ্য প্রিন্ট আরও জানিয়েছে, পলাতক আওয়ামী নেতাদের কেউ কেউ এখন একটি ‘গোপন পার্টি অফিস’ চালাচ্ছেন বলে গুজব ছড়ালেও, নিউ টাউনে অবস্থানরত এক সাবেক এমপি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসেন বটে, কিন্তু সেটিকে অফিস বলা ঠিক হবে না। ওই জায়গাটিকে তারা শুধু ‘দলীয় মিলনকেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করেন।

কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তার প্রতিদিনের রুটিন এখন অনেকটা নির্দিষ্ট ছন্দে বাঁধা। তিনি সকাল বেলা উঠে ফজরের নামাজ পড়েন, এরপর রুমমেটের সঙ্গে স্থানীয় জিমে যান। একজন ভারোত্তোলন করেন, আরেকজন পিলাটেস ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন।

তারা দুজন ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। ভাড়া মাসে ৩০ হাজার টাকা। রাঁধুনি না থাকলে নিজেরাই রান্না করেন। সেই এমপি বলেন, রান্নায় আমি খুব একটা পারদর্শী নই। আমার ফ্ল্যাটমেটও না। তবে যেদিন রান্না করতে হয়, সেদিন ভিডিও কলে ঢাকায় আমার স্ত্রীর সাহায্য নেই। দুপুরে কিছুটা বিশ্রামের পর সন্ধ্যায় তারা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেন। মিটিং হয় কলকাতা, দিল্লি, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের আওয়ামীপন্থি কর্মীদের সঙ্গে।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর সভাপতিসহ ১৫ নেতার পদত্যাগ

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাবেক কূটনীতিকও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের একজন হারুন আল রশিদ। আগে তিনি ছিলেন মরক্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সরকার পতনের পর তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।

বর্তমানে তিনি কানাডার অটোয়ায় বসবাস করছেন। সেখানে তিনি লেখালেখিতে সময় কাটাচ্ছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন একটি ডিসটোপিয়ান উপন্যাস। তিনি জানান, বাড়িতে নিয়মিত বই পড়েন, সীমিত বাজেট মেনে চলেন এবং বেশি দূরের কোনো কাজ নিতে চান না।

আরেক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তিনি এখন একা থাকেন কলকাতার একটি ২-বেডরুমের ফ্ল্যাটে। এই সময়টাকে নিজের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তিনি দিল্লির একটি ক্লিনিকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন। তার ভাষায়, চুল উঠে যাচ্ছিল। এখন নতুন করে মাথায় চুল উঠছে দেখে মনে হচ্ছে, অন্তত কিছু একটা তো ভালো হলো।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের এই জীবনযাপন এখন প্রশ্নের মুখে। কেউ এখনও আশা ছাড়েননি ফেরার। আবার কেউ এই সময়কে দেখছেন ব্যক্তিগত পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে। তবে আপাতত, তারা কেউই দেশে ফেরার মতো পরিবেশ দেখছেন না- এটিই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ