যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের পূর্ব আফ্রিকার সংঘাতকবলিত দেশ দক্ষিণ সুদানে পুনর্বাসনের সম্ভাবনা নিয়ে ইসরায়েল ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে ছয়জন অবগত সূত্র অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে নিশ্চিত করেছে। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে, এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষ-ঝুঁকিতে থাকা ভূমি থেকে অন্য এক সংঘাতপূর্ণ দেশে মানুষ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটবে, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত “স্বেচ্ছায় অভিবাসন” পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান, যার লক্ষ্য গাজার একটি বড় অংশের জনসংখ্যাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা। একই ধরনের প্রস্তাব অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোকেও দেওয়া হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি জনগণ, মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিকল্পনাকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের নকশা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
দক্ষিণ সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের কোনো আলোচনা চলছে এই প্রতিবেদন ভিত্তিহীন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক লবিং প্রতিষ্ঠানের প্রধান জো স্লাভিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুদানি কর্মকর্তারা তাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল শিগগিরই সম্ভাব্য ক্যাম্প নির্মাণের জন্য দেশটি পরিদর্শন করতে পারে।
মিশরীয় দুই কর্মকর্তা জানান, তাঁরা কয়েক মাস ধরে জানেন যে ইসরায়েল বিভিন্ন দেশ, বিশেষত দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ফিলিস্তিনিদের গ্রহণের বিষয়ে। মিশর এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছে যে গাজা থেকে ব্যাপক জনস্রোত মিশরের সীমানায় শরণার্থী সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
পূর্বে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের সঙ্গেও অনুরূপ আলোচনার খবর পাওয়া গেছে। এসব আলোচনার বর্তমান অবস্থা অজানা।
দক্ষিণ সুদান বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। দেশটি ২০১১ সালে স্বাধীনতার পর গৃহযুদ্ধে প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং বহু অঞ্চল দুর্ভিক্ষে পতিত হয়। শান্তি চুক্তি হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রয়ে গেছে।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী এডমুন্ড ইয়াকানি সতর্ক করেছেন, মুসলিম ও আরবদের সঙ্গে দক্ষিণ সুদানের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের কারণে ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ স্থানীয়ভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর ভাষায়, “দক্ষিণ সুদানকে মানুষের ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানানো উচিত নয়, কিংবা কূটনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য মানুষকে নেওয়া উচিত নয়।”