Friday, August 1, 2025

যেসব পুলিশ সদস্যের বিচার করে বাহিনীর গৌরব ফেরাতে চান আইজিপি

আরও পড়ুন

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় এনে ও তাদের সরিয়ে দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে স্বগৌরবে ফেরানো হবে। এ ছাড়া মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে রংপুরে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ’ বিষয়ক একটি কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বাহারুল আলম বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যারা অপরাধী (পুলিশ), তাদের বিচারের আওতায় এনে ও সরিয়ে দিয়ে পুলিশকে আবার স্বগৌরবে ফিরে আনা, কর্মক্ষম করে তোলা ও পুলিশকে আবার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি। দেশে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা আবেগের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, হয়তো তাদের অতীত স্মৃতি মনে করে দেয়, যখন পুলিশ অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে। অন্যায় আচরণ করেছে এবং গণবিরোধী আচরণ করেছে। নাগরিক সমাজের প্রতি আমার অনুরোধ পুলিশকে আপনারা কাছে টেনে নিন এবং তাদের কাজ করতে সহায়তা করুন।

আরও পড়ুনঃ  বাবা-মায়ের ঝগড়া থামাতে থানায় শিশু

পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যেসব অন্যায় সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো সঠিক তদন্ত করে বিচারের মাধ্যমে যদি নিষ্পত্তি না করা হয় এবং মানুষ যদি ন্যায়বিচার না পায়, তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। এ প্রয়াস যেন সুসম্পন্ন হয়, এ জন্য এখানে যারা বিচারক, সরকারি কৌঁসূলি, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসি আছেন, আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসের দরকার।

জুলাই আন্দোলনে যেসব শহীদের ময়না তদন্ত করা হয়নি, সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, অনেক মামলা হয়েছে, যেখানে ৫ আগস্টের অব্যবহিত পরে যথাযথভাবে মামলা করা হয়নি। একই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে, আবার শহীদের ঘটনায় আমরা ময়না তদন্ত করতে পারিনি। একটি ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে। একজন বলছিল যে জুলাই বিপ্লবের সময় শহীদদের উন্মুক্তভাবে কবর দেওয়া কঠিন ছিল। অনেক মা তার সন্তানকে ঝোঁপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে কবর দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  মাহফিলের নামে অপ্রয়োজনীয় শব্দ সন্ত্রাস থামাতে হবে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

তিনি তার ছেলে শহীদ হওয়ার বিষয়টিও বলতে পারেননি। কারণ বলতে গেলে তার ওপর অত্যাচার নেমে আসবে যে কেন তোমার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিল। কাঁদতেও পারেনি, কাঁদার স্বাধীনতাও ছিল না। যেখানে কবর দিতেই পারছে না সেখানে হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা অকল্পনীয়। এখন এসব মৃত্যুর সুবিচার ও ন্যায়বিচার দিতে হলে আমরা যদি আইনের প্রতি অক্ষরের দিকে চিন্তা করি যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেই তাহলে এই জাতির প্রতি, আন্দোলনের প্রতি, শহীদদের প্রতি আমরা হয়তোবা ন্যায়বিচার করতে পারব না। এই বিষয়ে এখানে উপস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেল বিস্তারিত বলবেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে যে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল, সে সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তার স্মৃতি আমাদের এখনো বহন করতে হচ্ছে। প্রায় এক হাজার শহীদ এবং কয়েক সহস্র আহত ছাত্র-জনতা আমাদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়, ৫ আগস্টের আগে ১৫ বছর আমরা কীভাবে অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিন কাটিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে ১৪ বিয়ে!

সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় মিলনায়তনে শুরু হওয়া এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

কর্মশালায় অংশ নেন বিভাগের আট জেলার বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত অফিসারসহ (ইউএনও) মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ