গৃহযুদ্ধের ধাক্কা এবং আর্থিক সংকটে পিষ্ট মায়ানমারে জীবনধারণ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করতে করতে অনেক নারী দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স এবং শিক্ষিকার মতো পেশাদার মহিলারাও।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমারের অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ধসে পড়ে। কোভিড অতিমারির ধাক্কা, মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে দেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
পশ্চিম মায়ানমারের বাসিন্দা এবং সদ্য চিকিৎসক ডিগ্রি পাওয়া ২৬ বছরের তরুণী মে জানান, ‘‘পরিবারের খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমাদের কাছে রোজগারের একমাত্র পথ যৌন ব্যবসা।’’
বিশেষত মান্দালয়ের মতো শহরগুলোতে, যেখানে বিদেশি পর্যটকরা আসেন, সেখানে বেআইনি ডেটিং বা যৌন ব্যবসার হার বাড়ছে। অনেক নারী এই পেশাকে বেছে নিচ্ছেন উচ্চ আয়ের জন্য।
একজন নার্স, জ়ার, জানান, ‘‘প্রথম দিকে লজ্জা লাগত, কিন্তু টাকার জন্য বাধ্য হয়েছি। এক রাতেই ৮০ ডলার পর্যন্ত আয় সম্ভব।’’
তবে এই পেশায় রয়েছে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়, যেখানে ঘুষ দিয়ে শাস্তি এড়াতে হয়।
মায়ানমারের ভেঙে পড়া অর্থনীতি, সীমান্ত বাণিজ্যের সংকট এবং কৃষিতে বিপর্যয় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সমীক্ষা বলছে, মহিলাদের আয় পুরুষদের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম, যা জীবনধারণের সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছেন। এমনকি গণতন্ত্রের সময় গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণিও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে
মায়ানমারের সামাজিক ও আর্থিক এই দুরবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়লেও বাস্তবে সমাধানের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দেশের অভ্যন্তরে নারীদের জন্য আর কোনো রোজগারের সুযোগ না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন এই পথ।