Friday, August 1, 2025

‘বিচার চাওয়ার জন্য তোফাজ্জলের মা-বাবা-ভাই-বোন কেউ নেই, তবে আমি আইনিভাবে লড়ব’

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাতের এ ঘটনায় নিহত তোফাজ্জলের হয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল্-ইমরান।

দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘এই ছেলেটির নাম তোফাজ্জল। আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই ছেলেটি বেশ স্বজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়।

এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অভিভাবক শূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩/৪ বছর ধরে। বিগত ২/৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওরে চিনতো সবাই সহযোগিতা করতো।

আরও পড়ুনঃ  প্রথম স্বামীর মৃত্যু, ফেসবুক পোস্টে যা লিখলেন পরীমণি!

ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করতো। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝে মধ্যে চেয়ে নিত। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোন চাহিদা ছিল না। হয়ত আজকেও খাবারের জন্য ও এফএইচ হলে গিয়েছিলো।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মু্‌হসিন হলের ছোট ভাই সাংবাদিক কবির কানন এর ফেসবুক ওয়ালে তফাজ্জলকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেখি যে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে এফএইচ হলে আটক করেছে। আমি দেখা মাত্রই কানকে ফোন করে তোফাজ্জলের বিষয়ে কাননকে অবগত করি যে ও আমার এলাকার ছেলে, আমি ওরে ব্যক্তিগতভাবে জানি, বর্তমানে ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

আরও পড়ুনঃ  মাকে ৪৬ কোপ দিয়ে মারার পরও ‘অনুশোচনা’ নেই মাদকাসক্ত ছেলের

হয়তো খাবারের সন্ধানে তোফাজ্জল এফএইচ হলে গেছে। আমি কাননকে বলেছিলাম তুমি ওখানে যারা এখন ওরে আটকে রেখেছে তাদের সাথে কথা বলো, তোফাজ্জল যে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা ওদের অবহিত কর, যাতে ওরে শারীরিকভাবে টর্চার না করে।’

‘কানন কিছুক্ষণ পরে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই অরে আর কেউ টর্চার করবে না, তবে আপনি অর কোন অভিভাবক কাউকে পাঠান যার কাছে তোফাজ্জলকে দিয়ে দিবে, আমি সেই ব্যবস্থা করতেছি। এরপর আমি আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করি এফএইচ হলে গিয়ে তোফাজ্জলকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি।’

আরও পড়ুনঃ  বাইডেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, যুদ্ধ থামাবে না ইসরায়েল

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেন, ‘২ ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছে। আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেলো, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো।

তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাওয়ার মত ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাবো।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ