Friday, April 11, 2025

২০ হাজার টাকাও দিতে পারছে না ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

আরও পড়ুন

১ই সেপ্টেম্বর রবিবার, সকাল ১০টা। সালাউদ্দিন সাহেব তার কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য ম্যানেজার রুহুলকে চেক দিয়ে পাঠান ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মাদপুর রিং রোড শাখায়।

রুহুল মিয়া ব্যাংকের সেই শাখায় গিয়ে দেখেন ব্যাপক লোকজনের উপস্থিতি, হট্টগোলের সৃষ্টি। কোনোভাবে তাদেরকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে চেক জমা দিলে জানতে পারেন, তার চেকটি এই মুহূর্তে ব্যাংক গ্রহণ করতে পারছে না। কোনোভাবেই ব্যাংকের পক্ষে চেকে উল্লেখিত সমপরিমাণ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।

এমন অবস্থায় ব্যাংকের সেই শাখা থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে তারা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দিতে পারবে কাউন্টার থেকে।

সেদিন ব্যাংক থেকে চেক দিয়ে টাকা না তুলেই ফিরে আসেন রুহুল মিয়া। এরপর কয়েকদিন টানা চেষ্টা করেও নিজের অ্যাকাউন্ট থেকেই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেননি তিনি।

এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদান করেন সালাউদ্দিন সাহেব। এরপর ব্যাংকের স্টাফদের পরামর্শে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা করে তোলার সিন্ধান্ত নেন তিনি।

এভাবে ৩ দিন টাকা তোলার পর ৮ই সেপ্টেম্বর সকালে ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই। ২০ হাজার টাকা তুলতে দুপুরে আসতে হবে। বেলা গড়িয়ে দুপুর নামতেও ব্যাংকে হাজির হয়ে দেখা মিলল একই চিত্র, মোহাম্মদপুরের এই শাখায় তখনও একজন গ্রাহককে ২০ হাজার টাকা প্রদান করতে পারছিল না ব্যাংকটি।

আরও পড়ুনঃ  সেনাবাহিনীতে বড় রদবদল

এদিকে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রোববার থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের সীমা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ইতিপূর্বে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গ্রাহক প্রতি পর্যায়ক্রমে ১ থেকে ধাপে ধাপে ৫ লাখ টাকা দৈনিক নগদ উত্তলনের সুযোগ রেখেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, এবার সেসকল বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। রোববার থেকে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা মতো ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন।

এর আগে, ৩১ আগস্ট একজন গ্রাহক পাঁচ লাখের বে‌শি নগদ টাকা উত্তোলন করতে না পারবে না বলে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে যেকোন পরিমাণ টাকা আরেক হিসাবে স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন বলে নির্দেশনা ছিলো।

জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। বিশেষ করে আওয়ামীপন্থি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ দেখা গেছে। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সেজন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে নগদ সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা তোলার সুযোগ ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নগদ উত্তোলনের সুযোগ আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে নতুন সীমা ঠিক করে দেয় আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থাটি।

আরও পড়ুনঃ  ঝাড়ফুঁক দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বৃদ্ধাকে হত্যা!

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ঘোষণার পরেও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের দূর্বল অবস্থা প্রকাশ্যে এসেছে। এসব ব্যাংক গ্রহকদের টাকা সঠিকভাবে দিতে পারছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।

এদিকে, দেশের ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তবে দেউলিয়া পর্যায়ে থাকা ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক টেকনিক্যাল, অ্যাডভাইজারি ও লিকিউডিটি সুবিধা দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার বিকেলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন গভর্নর। তিনি বলেন, দেশের ১০টি ব্যাংক ইতোমধ্যে দেউলিয়া অবস্থায় আছে, ‘আমরা চাই না কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক।

আরও পড়ুনঃ  দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস

ব্যাংকগুলো যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, আমরা সেই চেষ্টা করব। ব্যাংকগুলোকে টেকনিক্যাল, অ্যাডভাইজারি ও লিকিউডিটি সুবিধা দিব।’

ব্যাংক গভর্নরের এই ঘোষনা দেওয়ার পর গ্রাহকদের কপালে চিন্তার ভাজ দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের গচ্ছিত টাকার অনিশ্চয়তা ক্রমেই গ্রাস করছে তাদের।

এই বিষয়ে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এর কয়েকজন কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়ে জানান, খুব শ্রীঘ্রই ব্যাংকের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করছি। এই কঠিন সময়ে গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক থেকে পদত্যাগে বাধ্য করানো তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে। দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর বিদেশে থাকার পর সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরেন।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের অন্য পরিচালকরা হলেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুল আলম ও চার্টার্ড একাউন্টেন্ট মো. রাগিব আহসান এফসিএ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ