Tuesday, September 16, 2025

কাফীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি শহীদ ইয়ামিনের বাবার, বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির নানা চিত্র

আরও পড়ুন

আশুলিয়ায় ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপ ও পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তুলে পোড়ানোর নির্দেশদাতা ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এমআইএসটির শিক্ষার্থী শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর দাবি জানিয়েছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

জানা গেছে, নিজেকে আড়ালে রাখতে বেশ বদল করেছিলেন কাফী। দাঁড়িতে মুখ ঢেকেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গতকাল সোমবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।

এর আগে সোমবার সকালে মিরপুর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুল্লাহিল কাফীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন ইয়ামিনের বাবা। ওই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন কাফী।

আরও পড়ুনঃ  মাদক পাচারের অভিযোগে চলচ্চিত্র প্রযোজক গ্রেপ্তার

গত ১৮ জুলাই সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে পুলিশের সাঁজোয়া যানেই ঘুরিয়ে পরে সড়কে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।

আব্দুল্লাহ হিল কাফী দীর্ঘদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ধানমণ্ডি জোনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন থেকেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি পুলিশে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

২৯ ব্যাচের এই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাভারে বলা হয় গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড। গত ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে গুলি করে মানুষ হত্যার পর তা ভ্যানে তোলা ও পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ্য আসার পর গঠন করা হয় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ ছাড়াও আলোচিত ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর গঠিত তদন্ত দলের প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় কাফীর ইন্ধন ও নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুনঃ  নওগাঁ মাঠে মাঠে ফসলের সুবাতাস, আশার স্বপ্ন দেখছে কৃষক

এদিকে সাভারে আল মুসলিম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ডিজিএম আবু রায়হানকে বিনা কারণে আটক করে ভয়ভীতি দেখানো, নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার ও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২৫ লাখ টাকা নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে আবদুল্লাহিল কাফীর বিরুদ্ধে। আল মুসলিম গ্রুপের অর্থ বিভাগের পরিচালক ফিরোজ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আবদুল্লাহিল কাফীর কাছে জিম্মি ছিল শিল্পাঞ্চলের মালিকরা। তিনি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে নিরীহ কর্মকর্তাকে সীমাহীন হয়রানি করেছেন।

কাফীর অপকর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাভার মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান বলেন, ‘আজ তার কারণেই আমাদের জীবনে এত বিপত্তি। আসলে আমরা থানায় ছিলাম নামে ওসি। প্রকৃতপক্ষে তিনিই মূলত এসপি হয়ে ওসিগিরি করেছেন। খোদার কসম। কতবার বলেছি, স্যার আপনি নিরীহ মানুষদের ধইরেন না। উনি শোনেন নাই। নিজের মতো কাজ করে গেছেন।’

আরও পড়ুনঃ  কোথায় কেমন গরম পড়বে, জানাল আবহাওয়া অফিস

আশুলিয়া থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। তবে তিনি (কাফী) কি করেছেন তা সবাই জানেন। সবচেয়ে বড় কথা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হবার সুবাদে কাফী স্যার ৫ আগস্ট টের পেয়ে গিয়েছিলেন সরকারের পতন হচ্ছে। যে কারণে তিনি সাভারে আসেননি। কিন্তু ঠিকই ওয়্যারলেসে নিয়মিত গুলি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা মনে করেছিলেন কাফী স্যার বোধহয় সাভারে আছেন। পরে জানতে পারি তিনি সেদিন সাভারেই আসেননি। নিরাপদে থেকে আমাদের ঠেলে দিয়েছেন জনতার বিপরীতে। এর জন্যে ফোর্স কখনও তাকে ক্ষমা করবে না।’

আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেই সাভারে তিনি (কাফী) যা ইচ্ছে তাই করেছেন। আমি তার অনেক আচরণ সমর্থন করতাম না। তাই আমাকে তিনি ভিন্ন চোখে দেখতেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ