Saturday, June 14, 2025

মাকে ৪৬ কোপ দিয়ে মারার পরও ‘অনুশোচনা’ নেই মাদকাসক্ত ছেলের

আরও পড়ুন

সোমবার (৩ জুন) তপ্ত দুপুর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মর্গে পড়ে ছিল রিনা আক্তারের চন্দনার (৩৯) নিথর দেহ। মমতাময়ী এ মায়ের শরীর দেখলে শিউরে উঠবেন যেকেউ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল শুধু কোপের দাগ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ গুনে দেখেছে ৪৬টি আঘাত রয়েছে ভুক্তভোগী নারীর দেহে।

ঘাতক আর কেউ নন। নাড়িছেঁড়া একমাত্র সন্তান মো. ওমর ফারুকই (২৩) বটি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছেন তাকে। যেই সন্তান ১০ মাস এ মায়ের পেটে ভর করে দুনিয়ায় এসেছিলেন। শত যাতনা সয়ে কোলে-পিঠে বড় করেছেন তাকে। আর্থিক অনটনের মধ্যেও চেষ্টা করেছেন সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। কিন্তু পারেননি। কলেজ বয়সেই হয়ে ওমর পড়েন মাদকাসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতে শেষমেশ খুন করেন মাকেই।

আরও পড়ুনঃ  কঠিন দুঃসময়ের কবলে দেশ: মির্জা ফখরুল

মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকায়। এ থানার ভেলুয়ার দিঘির উত্তরপাড়ে একটি ভাড়া ঘরে থাকেন রিনা আক্তাররা। তার স্বামী মো. আকতার হোসেন (৫২) পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। আরেকজনের মালিকানাধীন অটোরিকশা ভাড়ায় চালিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন আকতার হোসেন।

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে রোববার (২ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে। প্রতিদিনের মতো এদিন সকালেও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন ওমর। মা-বাবা দুজনই তাকে ডেকে বোঝান এভাবে জীবন চলে না। তাকে মাদক ছাড়তে অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু কে শুনে কার কথা। উল্টো রেগে ঘর থেকে বের হয়ে যান ওমর। জীবিকার সন্ধানে আকতার হোসেনও বেরিয়ে পড়েন সিএনজি নিয়ে।

আরও পড়ুনঃ  বাসচাপায় সাবেক শিবির নেতা নিহত

এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে আকতার হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন নগরীর খুলশী থানার পাঞ্জাবি লেন পুলিশ বিট মোড়ে। তখন তিনি দেখেন, বটি হাতে এক তরুণ দৌড়াচ্ছে। পেছন থেকে তাকে ধাওয়া করছেন স্থানীয়রা। আকতার খেয়াল করে দেখেন যাকে ধাওয়া করা দেওয়া হচ্ছে সে তারই সন্তান। পরে দৌড়ে গিয়ে জানতে পারেন তার স্ত্রীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে পালাচ্ছিলেন ওমর। স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে ফেলেন ওমরকে। ততক্ষণে ঘরে পড়ে থাকে রিনা আক্তারের ক্ষতবিক্ষত দেহ নিথর হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ওমরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে পুলিশ রিনা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠায়।

আরও পড়ুনঃ  ঢাবি শিক্ষার্থীদের পেটাতে টিএসসিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র

সোমবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য রিনা আক্তারের মরদেহ কাটছিলেন ডোম। ওই সময় পাহাড়তলী থানা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন ওমর। নিয়ম অনুযায়ী তাকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। পাহাড়তলী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মঈনুর রহমান বলেন, পুলিশ হেফাজতে ওমর দুপুরের খাবার খেয়েছেন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি গর্ভধারিণী মাকে উপর্যুপরি কোপে খুন করেছেন। একেবারেই ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ