Tuesday, September 16, 2025

দস্যুদের নির্দেশ ছাড়া ঘাড় ফেরাতে পারছেন না নাবিকরা

আরও পড়ুন

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক শামসুদ্দিন বলেছেন, জলদস্যুদের নির্দেশ ছাড়া তারা ঘাড় ফেরাতে পারছেন না। এদিক-ওদিক করলেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে গুঁতো দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (১৬ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে জিম্মি নাবিক শামসুদ্দিন চট্টগ্রামে তার পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে এক মিনিটের মতো কথা বলেছেন। শামসুদ্দিনের পরিবারের ওই সদস্য বলেন, ‘দস্যুরা জাহাজের খাবার ইচ্ছেমতো খেয়ে ফেলছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে-২৪ ঘণ্টায় ব্যবহারের জন্য পানি দেওয়া হবে এক ঘণ্টা। ওয়াশরুমে ব্যবহার করতে হবে সাগরের পানি। সেহেরি ও ইফতারে দুই বেলা খাওয়ার দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘শামসুদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নতুন আস্তানায় নোঙর করার পর জাহাজে আরও ৩০-৪০ জন জলদস্যু উঠেছে। তাদের সবার হাতেই রয়েছে স্টেনগান, একে-৪৭ রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র। ডিউটিরত নাবিকদের কেবিনে থাকতে দেওয়া হলেও অন্য নাবিকদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জিন রুমে গাদাগাদি করে। জাহাজের ক্যাপ্টেন ও চিফ অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে।’

আরও পড়ুনঃ  প্রস্তুতি অনেক, নিশ্চয়তা নেই পণ্যের দাম কমার

তিনি আরও বলেন, জলদস্যুদের নির্দেশ ছাড়া তাদের ঘাড় ফেরাতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিক-ওদিক করলেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে গুঁতো দেওয়া হচ্ছে। কেবিনে থাকা নাবিকদের এক-দুই ঘণ্টা পরপর এসে নক করে যাচ্ছে জলদস্যুরা। এ অবস্থায় দিন যতই যাচ্ছে জিম্মি নাবিকদের মানসিক অবস্থা ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্ধারে মালিকপক্ষ ও সরকার যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সেই আকুতি জানিয়েছেন জিম্মি এই নাবিক পরিবারের সদস্যরা।

এক নাবিক ভয়েস মেসেজে বলেছেন, ‘একটি ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই। বড় বড় ফ্রিগেট আসছে দুইটা। একদম সব ইক্যুইপমেন্টস নিয়ে। কিন্তু ওরা ভয় পায় না এগুলো। ওরা আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। বড় বড় মেশিনগান গান তাক করে রাখছে। এ অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। যেহেতু জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে। ১৫ দিন পর খাওয়া-দাওয়া যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব।’

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রদের উপদেষ্টা করলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাদ যাবে?

চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ভাই আসিফ নুর বলেন, ‘শুক্রবার বিকালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এক মিনিট কথা বলেছেন তার ভাই। সবার আগে পানি সংকটে পড়বেন বলে জানিয়েছেন। একসঙ্গে ৪০ জন খাওয়া-দাওয়া করার কারণে দ্রুত খাদ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ঈদের আগেই যাতে তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয় সেই আকুতি জানিয়েছেন চিফ অফিসার।’

জানা গেছে, জিম্মি নাবিকরা ঈদের আগেই প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চান। স্বজনদেরকে ফোনে এবং ভয়েস মেসেজে এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তারা। নাবিকদের পরিবারগুলোও চাই ঈদের আগেই ফিরে আসুক তারা। এদিকে সরকার ও মালিকপক্ষ বলছে, জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে তাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। জিম্মিদের বিষয়ে সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যমকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আরও পড়ুনঃ  জাতি আবার ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে : ডা. শফিকুর রহমান

এদিকে শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদশের সব টেলিভিশন জিম্মিকারী জলদস্যুরা দেখে বা দেখার সুযোগ আছে। জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন তারা দেখে তখন জলদস্যুরা অনমনীয় হয়। জিম্মিদের উদ্ধারে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের অধীন এসআর শিপিং-এর সিইও মেহেরুল করিম বলেন, গ্যারাকাড উপকূল থেকে জাহাজটি জলদস্যুদের নতুন আস্তানা গোদবজিরান উপকূলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত ওইখানেই ছিল। নতুন কোনো আপডেটও আমাদের কাছে নেই।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘দ্বিতীয় দফায় গ্যারাকাড উপকূল থেকে ৪৫-৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে সোমালিয়ার ‘গোদবজিরান’ উপকূল থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করা হয়েছে। জলদুস্যদের পক্ষ থেকে শনিবার পর্যন্ত জাহাজের মালিকপক্ষ বা সরকারি কোনো সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ