ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন। এরপর নানা টালবাহানার মধ্যে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের। দায়িত্ব পায় নতুন প্রশাসন। ডাকসুর নির্বাচন উপলক্ষে গঠনতন্ত্র সংস্কার, আচরণবিধি প্রণয়নসহ নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে নতুন প্রশাসন।
নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সরব হয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কেউ প্রকাশ্যে কেউবা গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবে এমন নির্দেশনা না এলেও ভিতরে ভিতরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন তারা।
সংগঠনটির ঢাবি শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভিপি, ২০১৫-১৬ থেকে জিএস ও এজিএস, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সম্পাদক ও সদস্য পদে প্রার্থী আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অনেকের ভাষ্য, এবার জুনিয়ররাও তাদের ফেস ভ্যালুর কারণে ভালো পদ পেয়ে যেতে পারেন। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নেতাদের হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শেখ তানভীর বারী হামিম। তিনি ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ সেশনের যারা এখনো হলে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আছেন তারা হলের ভিপি পদে প্রার্থী হতে পারেন।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই ছাত্রদলের এবারের ডাকসুর প্যানেল ঠিক করবেন। এক্ষেত্রে পাঁচ আগস্টের আগে থেকেই যারা রাজনীতিতে যুক্ত, ক্লিন ইমেজের এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে পারবেন তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন করা হবে। অতীতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের মনমতো প্রার্থী ঠিক করা হলেও এবার তা হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
ইতোমধ্যে উপর মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই। অনেকেই কাজের মাধ্যমে যোগ্যতাকে শান দিয়ে নিজেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম।
আলোচনায় যারা
ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনের পদ সংখ্যা মোট ২৫টি। এর মধ্যে ভিপি (সহসভাপতি) ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ছাড়াও ১০টি সম্পাদক এবং ১৩টি সদস্যপদ রয়েছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যাদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে এবং এমফিল-এ অধ্যয়নরত আছেন তারাই ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী কিংবা ভোটার হতে পারবেন।
এবারের ডাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেলে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বিএম কাওসার, ফেরদৌস আলম, মো. আক্তারুজ্জামান বাপ্পী ও সাইফ খান তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। বিএম কাওসার ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয় একাত্তর হল সংসদে ভিপি, ফেরদৌস শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের জিএস ও আক্তারুজ্জামান বাপ্পী অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তবে এর মধ্যে কাওসার ও ফেরদৌস শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশি জনপ্রিয় বলে জানা যায়।
২০১৫-১৬ সেশন থেকে আলোচনায় রয়েছেন আবিদুল ইসলাম খান, মল্লিক ওয়াসী উদ্দিন তামী ও নূর। এর মধ্যে আবিদুল ইসলাম ও নূর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তামী দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব রয়েছেন। তবে আবিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মাঝে একটু বেশি পরিচিত বলে জানা গেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ বলে আলোচনায় আসেন তিনি।
২০১৬-১৭ সেশনের মধ্যে প্রচার সম্পাদক তানভীর হাসান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জারিফ রহমান, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার জিসান হায়াত, অর্থ সম্পাদক ইকরাম খান ও গণসংযোগ সম্পাদক মাইনুল আলম পাঠান শান্ত আলোচনায় রয়েছেন। এদের মধ্যে জারিফ ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত স্যার এ এফ রহমান হলে এজিএস প্রার্থী ছিলেন।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইমন মিয়া, ক্রীড়া সম্পাদক সাইফ উল্লাহ সাইফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ রিদওয়ান, আপ্যায়ন সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক ইমাম হাসান অনিক, ধর্ম সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকার, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন সম্পাদক বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে মেহেদী হাসানকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছিল নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদল সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৮-১৯ থেকেও ডাকসুতে কিছু পরিচিত মুখ স্থান পেতে পারে। এর মধ্যে আছেন কবি জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম, সূর্য সেন হলের সাহিত্য সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু, একই হলের প্রচার সম্পাদক প্রান্ত মাহমুদ, বিজয় একাত্তর হলের তানভীর আল হাদী মায়েদ। ২০১৭-১৮ সেশন থেকে যাদের মাস্টার্স এখনো চলমান তারা হল সংসদে ভিপি-জিএস পদে প্রার্থী হতে পারেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ছয় সদস্যের কমিটি কাজ করছে, যার নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জুনের মধ্যেই নির্বাচন চান। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বৃহস্পতিবার (০৮ মে) কালবেলাকে বলেন, ‘আশা করছি সামনের সপ্তাহে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারব। এ লক্ষ্যে আজ আমরা একটি সভা করব। নির্বাচন যত দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে করা যায় সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।’