Friday, August 1, 2025

যে তিন কারণে দেশে বিদ্যুৎ সংকট

আরও পড়ুন

জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের ধকলে পড়েছেন মানুষজন। রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায়ও দিনে ও রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে।

ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন কমেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। একইসাথে জ্বালানির আমদানি নির্ভর এ খাতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে সরকারের বকেয়াও বাড়ছে। ফলে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না।

দেশে বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম।

শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় রেখে গেছে তারই ফলশ্রুতিতে এই খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সম্পূর্ণ টাকা দেওয়া সম্ভব না হলেও যতটুকু টাকা দিয়ে সরবরাহ বজায় রাখা যায় ততটুকু দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  আ.লীগকে ১০ বছর নির্বাচন থেকে দূরে রাখা নিয়ে হানিফের বিবৃতি

এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, সাময়িক সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডলার পেমেন্ট করা হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের মূল সমস্যা ডলার সংকট। একে কেন্দ্র করেই অন্য সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে এই মুহূর্তে।

একইসঙ্গে বিগত সরকারের অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় বারো হাজার মেগাওয়াট। আগে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অথচ এখন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ খাত দিনে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে। এখন ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিডিবি।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দিনে গ্যাস আসে একশ দশ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭ মে থেকে বন্ধ। তবে আশার খবর এই যে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সামিটের এলএনজি টার্মিনাল সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতা থাকলেও ৬ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  ছাদ থেকে পড়ে নয়, আত্মহত্যা করেছেন শিক্ষার্থী অপর্ণা

অন্যদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট। ফলে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি লোডশেডিং ছিল।

ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দিনে দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় এখন এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তারা।

জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতে পলিসিগত যে ভুল সবচেয়ে ভয়াবহ হয়েছে সেটা হলো পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালী অর্থনীতির বিবেচনায় আমদানিনির্ভর করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতির একটি ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে।

এই জ্বালানির বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর আগে সরকার কখনো নিজেরা প্রাথমিক জ্বালানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অথবা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে গুরুত্ব দেয়নি।

আরও পড়ুনঃ  রাতের আঁধারে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিল এস আলম : সহযোগিতা করলেন বিএনপির দুই নেতা

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানির এই আমদানি নির্ভরতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। যা সরাসরি ডলারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও সরবরাহ লাইন না থাকা

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এ খাতকে চরম অব্যবস্থাপনার খাত হিসেবে অভিহিত করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন পাস করে এগুলোকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। এ আইনের অধীনে দরপত্র ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতারাও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা নেন।

অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হলেও সেগুলো থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অর্থের অভাবে গ্যাস ও তেল কেনা যাচ্ছে না। এরকম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি স্থগিত বা রিনিউ করা হয়নি।

দেশের দক্ষিণে চারটি বড় বড় কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো পায়রা, রামপাল, এস আলম এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ