বুয়েন্স আয়ার্সের রিভার প্লেটের স্টাদিও এল মনুমেন্তালে হঠাৎ বিশেষ আবহ। টানেল থেকে বেরিয়ে আসেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। গ্যালারিতে উপস্থিত সমর্থকদের ‘ফিডিও, ফিডিও’ গগনবিদারী চিৎকারে কেঁপে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম।
সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ!, ধন্যবাদ, ফিডিও, কখনও চলে যেও না, সমর্থকদের হাতে শোভা পাচ্ছিল এমন সব পোস্টার। দেশের জার্সিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলে বিদায় জাতীয় দলকে বিদায় জানালেন ডি মারিয়া। বিদায় বেলায় তার ঝুঁলিতে বিশ্বকাপ, দুটি কোপা আমেরিকা, ফিনালেসিমা ও অলিম্পিক স্বর্ণ–৫ টি বড় ট্রফি।
স্টেডিয়ামের জায়ান্ট টিভি স্কিনে তার মেয়ে মিয়ার চিঠি পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। ডান পায়ে গোড়ালির ইনজুরির আর্জেন্টিনায় আসতে পারেনি লিওনেল মেসি। তবে বন্ধুর বিদায় অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না তা কী হয়!
মায়ামিতে ভিডিও বার্তার মেসি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, তোমার জন্য এই বিশেষ রাতে আমি সেখানে থাকতে পারিনি। আমি তোমার জন্য পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে একটি দুর্দান্ত রাত উপহার দিতে চেয়েছিলাম। তুমি, আমাদের যা কিছু দিয়েছ এবং যা করেছ তার জন্য তুমি এটি প্রাপ্য।
ব্যক্তিগতভাবে, আমরা একে অপরকে বলার মতো সব কিছুই বলে ফেলেছি। কে ভেবেছিল, জাতীয় দলের সঙ্গে সবকিছু এভাবেই শেষ হয়ে যাবে? এক সাথে আমাদের খুব কঠিন সময় গেছে। তারপর আমরা একসাথে বিশ্ব ও কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমরা তোমাকে অনেক মিস করব।’
বিদায় বেলা জাতীয় দলের সকল ফুটবলারদের গায়ে ছির ১১ নম্বর জার্সি। ডি মারিয়ার ১১ নম্বর জার্সিতে দেওয়া হয়েছে জিওভানি লো সেলসোকে। অনুষ্ঠানিকতার শেষ দিকে চোখ ভর্তি অশ্রু আর বেদনাময় কণ্ঠে বিদায়ী বক্তৃতা দেন ডি মারিয়া।
তিনি বলেন, ‘আমার ভিতরে অনেক অনুভূতি কাজ করছে। আমি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসেসিয়েশনে কর্মরত সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তাদের সঙ্গে ১৬ বছর কাটিয়েছি। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা অনেক আনন্দ অনুভব করেছি। আমি সেই সব কোচ ও সতীর্থদের ভুলতে চাই না, যারা এর মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তারা আমাকে লড়াই চালিয়ে যেতে শিখিয়েছে। আমি এই দলের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞও থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সর্বত্রই জাতীয় দলকে অনুসরণ করব। সবশেষে, আমি আমার পুরো পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যখন সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছিল না, তখন তারা আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করে গেছে। আপনাদের সকলকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। এখন আমি আপনাদের (ভক্তদের) পাশে থেকে জাতীয় দলকে সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
নিজ শহেরর ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রাল দিয়ে শুরু তার ফুটবল ক্যারিয়ার। এরপর বেনফিকা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, পিএসজি এবং জুভেন্তাসের মতো ইউরোপ সেরা ক্লাবে খেলেন তিনি।
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকের ফাইনালে তার গোলে স্বর্ণ জেতে আর্জেন্টিনা। ২০২১ সালে মারাকানায় ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার জয়ের ফাইনালেও গোল করেন তিনি।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল রয়েছে তার। এমনকি ওয়েম্বলিতে ইতালির বিপক্ষে ফিনালেসিমাতেও গোল করেন ডি মারিয়া। অর্থ্যাৎ আর্জেন্টিনার সব বড় সাফল্যে তার অবদার রয়েছে। আর সেই স্মৃতি গুলোকে সঙ্গী করেন বিদায় জানালেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে।