জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি সাকলাইন সাদাত তন্ময়। এই পদ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভাগের কেউ ছাত্রলীগের বিপক্ষে কথা বললে করতেন হেনস্তা। তবে সরকার পতনের পরও তার দাপট কমেনি। এখনো ক্লাসরুমে এসে শিক্ষার্থীদের হুমকিধামকি দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রলীগের সভাপতি সাদাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের অনুসারী। ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে হেনস্তা করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তন্ময়কে বয়কট ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে সরকার পতনের পর পাঠদানের সুযোগ চাইলে বন্ধু হিসেবে আগের ঘটনা ভুলে তাকে ক্লাসরুমে একসঙ্গে ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই বয়কট দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা রকম হুমকিধামকি দিচ্ছেন তিনি। এ ঘটনায় রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর সাদাতের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ দিয়েছেন তারই ক্লাসের এক নারী সহপাঠী।
এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার সূত্রপাত কয়েক মাস আগে। ছাত্রী হলে অনেক ছাত্রলীগের মেয়েরা বিনা টাকায় খাবার খেত। এর বিরুদ্ধে আমি সে সময় ব্যাচের গ্রুপে অভিযোগ জানাই। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেটার স্ক্রিনশর্ট নিয়ে সাদাত তন্ময় হলের ছাত্রলীগের মেয়েদের দেয়।
মেয়েরা আমাকেসহ কয়েকজনকে ডেকে মানসিক টর্চার চালায়। পরে সাদাতও হুমকি দিতে থাকে। কেন আমি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম। এই বিষয় তুলে ধরে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। সে সময় এটা মুখ বুঝে সহ্য করেছিলাম ছাত্রলীগের ভয়ে।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, সরকার পতনের পর আমি বলেছিলাম ওই সময় আমাদের হেনস্তা করেছিল সাদাত। এখন তাহলে ব্যাচের গ্রুপে সবার সামনে ক্ষমা চাইবে সে। কিন্তু এটা বলায় সে আবারও আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল। বিভাগের চেয়ারম্যান স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এটা নিয়ে স্যার আমাদের ডেকেছেন।
এদিকে রসায়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এর আগে রসায়ন বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সৌরভ বিজয়কে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতারের অনুসারীরা বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় রসায়ন বিভাগে তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি হলে সেসময় বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদাতের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাদাতের বন্ধুরা জানান, কোটা আন্দোলনের সময় সাদাত সুযোগ সন্ধানীভাবে নিজের অবস্থান অটুট রাখে। সে ফেসবুকে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনো পোস্ট না দিলেও শাখা ছাত্রলীগের মেসেঞ্জার গ্রুপে নিয়মিত সক্রিয় ছিল।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রসায়ন বিভাগের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সাকলাইন সাদাত তন্ময় বলেন, আমাদের দুজনের ভিতরে একটু ঝামেলা হয়। দুইপক্ষ লিখিত দিয়ে মীমাংসা হয়ে গেছে। হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।