Friday, April 18, 2025

মৃত্যুর আগে মা-বাবা’র ছবি দেখতে চেয়েছিলো পুলিশ কন্সটেবল রুবেল

আরও পড়ুন

১৪০টি ট্যাবলেট খেয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মিয়া’র নিথর দেহ তার জন্মভূমি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী আখড়ালপাড়ায় মঙ্গলবার (১১ জুন) পৌঁছে।

ভালো-মন্দ কুশল বিনিময়ের সময় হঠাৎ করে ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে বলেছিলো ‘মা-বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তুই কোনো কষ্ট দিস না, তোর অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো সমস্যা হয়েছি কি এমন প্রশ্নের উত্তরে বললো, না কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সমাধানও আছে,তুমি বাড়িতে আসো, রুবেল তখন জানায়, কাল (মঙ্গলবার) বাড়িতে আসবে, কোন এক সময়, সে সময় রাসেলের নিকট বাবা-মা’র ছবি থাকলে কয়েকটা ছবি মোবাইলে দিতে বলেছিলো রুবেল।পুলিশ কন্সটেবল রুবেল মিয়ার মৃত্যুর পূর্বে এসব কথা হয় হোয়াটস আপে তার ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে।

আরও পড়ুনঃ  যু*ক্তরাষ্ট্রে ভয়া*বহ দাবানলে পালাচ্ছেন মানুষ, পু*ড়ে ছাই ১১০০ ঘরবাড়ি

ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে দেয়া কথাও রেখেছে রুবেল মিয়া। মঙ্গলবার (১১ জুন) নিজ জন্ম ভূমিতে সে ফিরে এসেছে। তবে সাদা কাপড়ের ওপরে কালো পলিথিনে মোড়ানো চিরঘুমে থাকা নিথর দেহ। বিকেলে নিথর দেহের ওপর লুটিয়ে পড়েন স্বজনরা। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মোর্ছা যান তার মা নুরুন্নাহার বেগম। স্বামী হারানো জেসমিন আক্তারের দু’সন্তানকে নিয়ে আর্তনাদে শোকে কাতর স্বজনরা কেউ চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি।

রুবেল মিয়া এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের পুত্র। ২০১৪ সনে পাছার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। ২০১৬ সনে যোগ দেয় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। সর্বশেষ কর্মস্থল নেত্রকোণা মডেল থানা।

পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় সর্বশেষ কথা হয় ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে। সেই কথা শেষ হওয়ার পর রাতে ১২টার দিকে ফেসবুক আইডিতে ‘দ্য ইন্ড’ লিখে স্ট্যাটাস দেন রুবেল মিয়া। এটি রাত ১২টার দিকে তার ছোট ভাই রাসেল মিয়া দেখে পুলিশ জরুরি নাম্বার ৯৯৯ এ কল দেন। এরপর নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। দ্রুত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকাল পাঁচটার দিকে রুবেল মিয়া মারা যান।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষার্থী সেজে চাঁদাবাজি, তরুণী আটক

তিনি নেত্রকোণা শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত সপ্তাহে স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে চলে যাওয়ার পর থানা ব্যারাকে থাকতেন।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, কনস্টেবল রুবেল মিয়া ৮ বছর ৬ মাস ২৯ দিন আগে পুলিশে যোগদান করেন। নেত্রকোণা মডেল থানায় ১ বছর ৬ মাস আগে যোগদান করেন। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়মনসিংহে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আরও পড়ুনঃ  বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল একই পরিবারের ৩ জনের

মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেল ৪টায় তার লাশ নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী আখরালপাড়ায় পৌঁছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ