ফেসবুক এখন কেবল সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম নয়, একবিংশ শতাব্দীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান, শহর থেকে গ্রাম সবখানেই এই প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে খবর, বিনোদন, মতামত ও ব্যক্তিগত জীবনের এক যৌথ যাত্রাপথ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ এক বিব্রতকর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন নিজেদের অজান্তেই ফিডে চলে আসছে অশ্লীল, আপত্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও কনটেন্ট।
শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, এমনকি গৃহিণী সবারই অভিন্ন অভিযোগ হচ্ছে ফেসবুক চালাতে গিয়ে এমন সব কনটেন্ট চোখে পড়ে যা তারা কখনো দেখতে চাননি। কখনো পরিবার বা সহকর্মীদের সামনে মোবাইল স্ক্রলে এমন দৃশ্য ভেসে উঠলে পড়ে যেতে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
অনেকের অভিযোগ রয়েছেন, তারা এসব ভিডিওতে ক্লিক না করলেও ফেসবুকের ‘Suggested for You’ বা ‘আপনার জন্য প্রস্তাবিত’ অংশে নিয়মিত এমন ভিডিও আসছে। কেউ কেউ একবার ভুলবশত ক্লিক করলেও, সেই ক্লিককে ভিত্তি ধরে ফেসবুকের অ্যালগরিদম যেন ভবিষ্যতের জন্য আরও অনুরূপ ভিডিও দেখাতে শুরু করে।
তবে এসব অশ্লীল ভিডিও ও কনটেন্ট থেকে মুক্ত থাকার উপায় রয়েছে। এই পদ্ধতি জানা থাকলে সচেতন ব্যবহারেই নিজের ফিডকে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্টমুক্ত রাখা সম্ভব।
যেভাবে বন্ধ করবেন ফেসবুকের অশ্লীল ভিডিও:
প্রথমত, যদি কোনো অশ্লীল ভিডিও বা রিল আপনার ফিডে আসে, সঙ্গে সঙ্গে ‘Hide Video’ অথবা ‘Not Interested’ অপশনটি বেছে নিতে হবে। এই অপশনটি ব্যবহারের ফলে ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বুঝে নেয়, আপনি এ ধরনের কনটেন্টে আগ্রহী নন। এভাবে কয়েকবার এমন ভিডিও হাইড করলে ধীরে ধীরে এসব ভিডিও আসা কমে যাবে।
দ্বিতীয়ত, ভিডিওর পাশে থাকা তিনটি ডট অপশন থেকে ‘Report Video’ বেছে নিয়ে ‘Sexual content’ অপশন সিলেক্ট করে রিপোর্ট করুন। যদি ভিডিওটি ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইনের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভিডিওটি সরিয়ে ফেলবে এবং সেই উৎসকে সতর্ক করবে।
তৃতীয়ত, যদি এমন ভিডিও কোনো বন্ধু বা পেজ বা গ্রুপ থেকে আসে, তাহলে সেই উৎসকে আনফ্রেন্ড, আনফলো বা গ্রুপ থেকে লিভ দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার এমন ভিডিও পোস্ট করলে তাকে ‘Restrict’ বা ‘Block’ করাও একটি কার্যকর পদ্ধতি।
ফেসবুক অ্যাপে বা ওয়েব সংস্করণে গিয়ে ‘News Feed Preferences’ মেনু থেকে আপনি কার কনটেন্ট বেশি দেখতে চান, তা কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এতে ফিডে আপনি যে ধরনের কনটেন্ট চান, সেই অনুযায়ী ফেসবুক সাজেশন দেবে।
শিশুদের নিরাপদ রাখতে যা করবেন:
পরিবারে শিশু-কিশোর সদস্যদের ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘Messenger Kids’ অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে অভিভাবকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। একইসঙ্গে ব্রাউজারে ‘SafeSearch’ বা ‘News Feed Eradicator’ নামের এক্সটেনশন ইনস্টল করে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট ফিল্টার করা যায়।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রযুক্তিগত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যক্তিগত সচেতনতা। অনেক সময় ভুল করে কোনো ভিডিও লাইক দেওয়া, দীর্ঘক্ষণ দেখা বা শেয়ার করার কারণেও ফেসবুক অ্যালগরিদম ধরে নেয় আপনি ওই ধরনের কনটেন্টে আগ্রহী। তাই ব্যবহার করতে হবে সতর্কভাবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজেও বিভিন্ন সময় ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন ফিচার যুক্ত করেছে। তবে ব্যবহারকারীরাই যদি কনটেন্ট ফিল্টার, রিপোর্টিং ব্যবস্থা ও প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকভাবে না ব্যবহার করেন, তাহলে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।