Friday, August 1, 2025

পাকিস্তানে গুপ্ত হ’ত্যা মিশন চালাচ্ছে ভারত : রিপোর্ট

আরও পড়ুন

২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানে প্রায় ছয় ব্যক্তিকে গুপ্ত হত্যা করেছে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের হত্যাকাণ্ড মিশনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

পাকিস্তানের ছয়টি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তা, জঙ্গিদের সহযোগী এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং পাকিস্তান পুলিশের তদন্তে সংগৃহীত নথি এবং অন্যান্য প্রমাণের পর্যালোচনা করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তারা ভারতীয় এই গুপ্তহত্যা কর্মসূচির একটি রূপরেখা প্রকাশ করেছে, যার সঙ্গে উত্তর আমেরিকায় চালানো তাদের অভিযানগুলোর উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি আমির সরফরাজ তাম্বা নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। ওই ব্যক্তি ২০১৩ সালে কোট লাখপত কারাগারে ভারতীয় বন্দি সরবজিৎ সিংকে হত্যা করেছিল। তাম্বার ওপর হামলার ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ছায়াযুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য পরিণতি বলে অভিহিত করেছে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা।

পাকিস্তানি ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ‘যদিও ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের দেশে বিশৃঙ্খলার বীজ বপনের জন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছে, তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ২০২১ সাল থেকে একটি পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ড কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অন্তত ১৮ জনকে খুন করা।’

আরও পড়ুনঃ  হত্যার ঠিক আগে শত্রুপক্ষের সঙ্গে একমত হন নাসরুল্লাহ, চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেকে সবচেয়ে ‘দৃঢ় ও সংঘাতময় নেতা’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “গত বছর থেকে পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে, ‘র’ কর্মকর্তারা কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তারা মনে করছেন, গুপ্তহত্যার অপারেশনটি পাকিস্তানে প্রথমে পরীক্ষামূলক চালানো হয় এবং পরে তা পরিমার্জিত করা হয়।”

পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের মতে, দেশটিতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো স্থানীয় ছোটখাটো অপরাধী বা ভাড়াটে আফগান বন্দুকধারী দিয়ে চালানো হয়েছিল, তবে ভারতীয় কোনো নাগরিক সেগুলোতে অংশ নেয়নি। দেশটির তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, “এসব হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করতে র কর্মকর্তারা দুবাইতে ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত করেছিল। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এবং লক্ষ্যবস্তুতে নজরদারি করতে, হত্যাকাণ্ড চালাতে এবং বেশকিছু অনানুষ্ঠানিক, অনিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক হাওয়ালা থেকে অর্থ প্রদানের জন্য পৃথক গোপন দল ব্যবহার করে ‘র’। কিন্তু তারা মাঝেমধ্যে নিম্নপর্যায়ের ট্রেডক্রাফট ও দুর্বল প্রশিক্ষণের ঠিকাদার ব্যবহার করত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আইন প্রয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণ করছেন।”

প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদ, যাদের বিরুদ্ধে ভারত অতীতে তার সৈন্য ও নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনেছে। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার ও গুরপতওয়ান্ত পান্নুনকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যাদের ভারত সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। যদিও পশ্চিমা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সরকারের দাবির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  গলফ কার্টে বসে ওমরাহ করার ব্যবস্থা করল সৌদি

পাকিস্তানে ভারতের তৎপরতার অনেক দিকই আগে প্রকাশ করা হয়নি। কারণ হত্যাকাণ্ডগুলো পাকিস্তানের জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। এতে তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর গোয়েন্দা শাখার কার্যকারিতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। একইসঙ্গে দেশটির পক্ষে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দেওয়ার দাবিকে দুর্বল করে। তবে কিছু পাকিস্তানি কর্মকর্তা এখন দাবি করছেন, মোদির ভারতকে বিশ্বশক্তি হিসেবে দাঁড়াবার এই সময়ে অবশ্যই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পরিচালক জেনারেল নাদিম আনজুম ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএয়ের পরিচালক উইলিয়াম জে বার্নসের কাছে ভারতীয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে এ তথ্য জানান। দেশটির একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তদন্তের স্বাধীনতা নিয়ে। ভারত কি শান্তিতে বেড়ে উঠতে পারে? আমাদের উত্তর হলো—না।’

আরও পড়ুনঃ  পশ্চিমবঙ্গে ড. ইউনূস বিরোধী পোস্টার

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে মন্তব্য করতে ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি ভারতীয় এই কথিত অভিযানগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। টার্গেট গুপ্তহত্যার সঙ্গে র’য়ের সংশ্লিষ্টতা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মতোই দেখা গেছে। মোসাদ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সফলভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ২০১০ সালে দুবাইয়ে এক হামাস নেতাকে হত্যায় চালানো অভিযানের সময় হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় মোসাদের এজেন্টদের দেখা গিয়েছিল।

ক্ল্যারি বলেন, ‘র’ পশ্চিমা দেশে এই প্রচেষ্টা শুরু করার আগে পুরো এক বছর ধরে পাকিস্তানে সফল অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানে যে কৌশল ও পদ্ধতি খুব ভালোভাবে কাজ করেছে, তবে তা পশ্চিমা দেশে করেনি।’

প্রখ্যাত ভারতীয় সামরিক ইতিহাসবিদ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা শ্রীনাথ রাঘবন বলেছেন, মোদি সরকার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিশেষ বাহিনীর অভিযানকে তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, “তাদের ট্যাগলাইন হলো ‘এটি নতুন ভারত’। মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, আপনাকে পাল্টা আঘাত করতে হবে এবং আপনাকে সেটির প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিতে হবে। এর উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে বলা যে, আমরা কঠোর আঘাত করতে ইচ্ছুক, তবে এর একটি অভ্যন্তরীণ উপাদানও রয়েছে।”

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ