গত ২৫ নভেম্বর ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তিনি এখন কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ও ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট’ নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তারা আট দফা দাবি বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি সমাবেশ করে।
ইসকনের তথাকথিত ধর্মীয় এই গুরুর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের পর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে পরিস্থিতি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ইসকন আসলে কী ধরনের সংগঠন এবং তাদের কার্যক্রম কী?
সোস্যাল মিডিয়া মারফত আমরা যা জানি, সেটা হলো, ইসকন একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালনার সংগঠন। এ সংগঠনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করা।
ভারতে ব্যাপকভাবে ইসকনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে ইসকনের জন্ম ভারতে নয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে গঠিত হয় ইসকন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার নাম ‘অভয়চরণা রবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’। তবে তিনি ভারতে কোনো হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেননি, তিনি লেখাপড়া করেছেন খ্রিস্টানদের চার্চে।
বাংলাদেশের হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন, ‘ইসকন’ কী ধরনের সংগঠন, এই সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন আছে কি না, কারা এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না ইত্যাদি। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে এ তথ্য আদালতে জানাতে বলা হয়েছে।
যাহোক, ইসকনের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথম কথা হলো, ইসকন কিন্তু হিন্দুদের কোনো সংগঠন নয়। এটি হিন্দুবেশধারী ইহুদীদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। বাংলাদেশে ‘র’ একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ইসকন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থের এক জায়গায় লেখা আছে, ‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।’ (বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা, বাংলাদেশে ‘র’ পৃষ্ঠা: ১৭১)
ঐ বইয়ে আরো লেখা আছে, ইসকনের সৃষ্টি ভারতে নয়, আমেরিকার নিউইয়র্কে। ১৯৬৬ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠাতার নাম ‘অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’। অবাক হওয়ার মতো বিষয়, এ ব্যক্তি ভারতে কোনো হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেননি, লেখাপড়া করেছেন খ্রিস্টানদের চার্চে। পেশায় তিনি ছিলেন ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী। কিন্তু হঠাৎ করেই তার মাথায় নতুন এক চিন্তার আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্কার করতে তিনি উদ্যোগী হন। স্বামী প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করেন। কিন্তু মূল ধারার সনাতনী হিন্দুরা এর বিরোধিতা শুরু করে।
অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ইহুদি এজেন্টরা। জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মতো চিহ্নিত ও বিখ্যাত ইহুদী এজেন্টরা স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। (https://goo.gl/vf9wyi)। ইসকন মূলত একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এ সংগঠনটির মৌলিক বিশ্বাস মধ্যযুগের চৈতন্য থেকে উদ্গত। চৈতন্য’র অনতম থিউরী হচ্ছে, ‘নির্যবন করো আজি সকল ভুবন’, যার অর্থ হলো সারা পৃথিবীকে মুসলমান মুক্ত করো।
এ সংগঠনটি হিন্দুদের অধিকাংশ মৌলিক বিশ্বাসকে অস্বীকার করে। হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস এখানে উপেক্ষিত। এ সংগঠন নিজেদের সৃষ্ট মতাদর্শ হিন্দুদের উপর চাপিয়ে দেয়। এদের চেনার সহজ উপায় হলো, এরা সব সময় ইউরোপীয় সাদা চামড়াদের সামনে নিয়ে আসে। সংগঠনটি মূলত এনজিও টাইপের। এরা নি¤œবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। এ কারণে তাদের আস্তানাগুলো সাধারণত নি¤œবর্ণের হিন্দুদের আস্তানার পাশে গড়ে উঠেছে। যেমন ঢাকা শহরে স্বামীবাগ মন্দিরের পাশেই তৈরি করা হয়েছে ইসকন মন্দির। কারণ, স্বামীবাগে রয়েছে বিশাল মেথর পট্টি। এই মেথর পট্টির নিচুবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে তারা দল ভারি করেছে। সিলেটেও ইসকনদের প্রভাব বেশি। কারণ, চা শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নিচু বর্ণের হিন্দু। এদেরকে দলে নিয়ে দল ভারি করে অতি সহজে কাজ করে চলেছে ইসকন।
বর্তমানে সারা দুনিয়ায় ইসকন পরিচালিত হচ্ছে সরাসরি ইহুদি কর্তৃক। ইসকনের মূল নীতিনির্ধারকদের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে ইহুদী। (http://goo.gl/xS3sfH). বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকা- ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নিয়েছে। তাদের মূল কাজ হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা। এ লক্ষ্যে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী মন্দির দখলের পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে তারা দেশের অনেক মন্দির দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হলো তাদের মূল উদ্দেশ্য।
উদাহরণস্বরূপ ঢাকার স্বামীবাগের মন্দিরটির কথা উল্লেখ করা যায়। এ মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিলো। বর্তমানে সেটি ইসকন দখল করে নিয়েছে। সনাতনীরা এর প্রতিবাদ করলে ইসকন তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। শুধু ঢাকা নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের দখলদারিত্ব কায়েম করেছে ইসকন। পঞ্চগড়ে ইসকনের লোকজন সনাতনদের পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে নিয়েছে ইসকন। এছাড়া সিলেটের জগন্নাথপুরেও সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিন্টু ধর। (খবরের সূত্র:http://goo.gl/XwkLvm,http://goo.gl/7hegYE
শুধু মন্দির দখলেই সীমাবদ্ধ নেই ইসকন। বাংলাদেশের বড় বড় মসজিদগুলোও ইসকনের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। মসজিদগুলোতে তারা সাম্প্রদায়িক হামলা করেছে। ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবির নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো ইসকন। নামজের সময় ইসকনের গান-বাজনা বন্ধ রাখতে বলায় তারা পুলিশ ডেকে এনে তারাবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল! পরে বিষয়টি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। ভাবা যায়! ৯০% মুসলিমদের দেশে যারা মসজিদের উপর হামলা ও তারাবির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে! তাদের শক্তির উৎস নিশ্চয়ই শুধু বাংলাদেশে নয়। মূলত তাদের শক্তির মূল উৎস হলো ভারত ও ইসরাইল। আন্তর্জাতিক ইহুদি সংস্থা তাদের অর্থায়ন করে। একই সঙ্গে ভারত সরকার তাদের প্রশিক্ষণ, শক্তি ও অর্থ দিয়ে সক্রিয় সহযোগিতা করে। ভক্তিযোগ অনুশীলন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা ও হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা এই সংগঠনের উপজীব্য হলেও তাদের মূল লক্ষ্য মুসলিম নিধন। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মাধ্যমে তারা চায় বিশ্ব থেকে মুসলিম শূন্য করা। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন নামে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলেছে। এ সংগঠনগুলোর অন্যতম হলো, বৃহৎ গ্রন্থ-প্রকাশনী সংস্থা ‘ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট’। এ ট্রাস্ট তাদের স্বতন্ত্র দর্শনের গ্রন্থাবলী প্রকাশ করে থাকে। এটি তাদের বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত অন্যতম প্রধান প্রকাশনা সংস্থা। এছাড়া সনাতনী মতাদর্শের বাইরে গিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলেছে অসংখ্য মন্দির। বর্তমানে বিশ্বে ইসকন নির্মিত মন্দিরের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এসব মন্দিরের অধীনে রয়েছে শত শত খামার সংগঠন বা স্বনিযুক্তি প্রকল্প। রয়েছে শত শত বিদ্যালয় ও ভোজনালয়। বর্তমানে পূর্ব ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য এশিয়ায় ও ভারত উপমহাদেশে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে
বাংলাদেশে ইসকনের আরেকটি মিশন হলো, এদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করা এবং উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো। জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি তাদেরই সৃষ্ট। বর্তমান বিশ্বময় অনলাইন জগতে ধর্ম অবমাননার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তার ৯০%ই করে ইসকন সদস্যরা। বাংলাদেশে বিগত দেড় দশকে চাকরি ক্ষেত্রে প্রচুর হিন্দু ও ভারতীয় নাগরিক প্রবেশ করেছে। হিন্দু ও ভারতীয় নাগরিককে চাকরি দিতে ইসকন প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। সিলেটে রাগীব রাবেয়া মেডিকলে কলেজ নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল তার পেছনের মদদদাতা ছিল ইসকন। ইসকন আড়াল থেকে পুরো ঘটনা পরিচালনা করেছিল। বিগত দেড় দশকে বিচারবিভাগ ছিল ইসকনের নিয়ন্ত্রণাধীন। সাবেক এক প্রধান বিচারপতি ছিলেন সরাসরি ইসকনের প্রভাবশালী সদস্য। আগষ্ট বিপ্লবের পরেও এ বিভাগ থেকে এখনও ইসকনের প্রভাব দূর হয়নি। (http://goo.gl/g3w0KK).
ইসকনের বিরুদ্ধে উগ্রবাদিতার অভিযোগ থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও রাশিয়ায় ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরেও এটির কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয় না। এছাড়া ইসকনের কর্মকা- তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কেমেনিস্তানে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে যদি এখনই ইসকনকে নিষিদ্ধ না করা হয়, তবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে।