Monday, December 23, 2024

১২ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি, নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ সরকারের যত দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এরমধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। একটি হত্যা মামলায় ধানমন্ডি এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন রিমান্ডে রয়েছেন।

একে তো ছিলেন মন্ত্রী, আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি। তাই এই খাতে তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। ছিল বিশাল মাস্তান বাহিনী। তিনি যা নির্দেশ দিতেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করত তার বাহিনী।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে শাজাহান খানের লোকজন। এর মধ্যে তার ছত্রছায়ায় গত ৪ বছরেই ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে। করোনার পর গত ৪ বছর ‘সড়ক পরিবহনে সংগঠন পরিচালনা ব্যয়’ সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করে এই চাঁদাবাজিকে দেওয়া হয় বৈধতা।

আরও পড়ুনঃ  ভাতের হোটেলের সেই ডিবি হারুনের বিলাসবহুল রিসোর্টে অভিযানে যা পাওয়া গেল

অভিযোগ আছে, সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিয়েছেন শাজাহান খান। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯ শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হয়েছে। এর একটি বড় অংশ নিয়মিত গেছে শাজাহান খানের পকেটে।

বিগত সময়ে বিএনপির নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের ডাক দিলেই বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের যান চলাচল। এর নেপথ্যেও ছিলেন এই শাজাহান খান। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের অন্যতম বাধাও ছিলেন তিনি।

এদিকে নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যা ২০২৪ সালে হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময়ে তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ।

আরও পড়ুনঃ  মধ্যরাতে রহস্যজনক ঘটনার শিকার সোহেল তাজ

সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিবহন খাতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন নেতা শাজাহান খান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবহন খাতে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল তার। ২০০৯ সাল থেকে সড়কে বিক্ষিপ্ত আকারে নানা অঙ্কের চাঁদা তোলা হতো।

করোনাকালে বন্ধের পর ২০২০ সালের ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে ২০২০ সালের জুন, জুলাই ও আগস্ট এই ৩ মাস সড়কে চাঁদা তোলা বন্ধ ছিল। এ সময় চাঁদা তোলার নতুন ফন্দি আঁটা হয়। প্রণয়ন করা হয় সড়ক পরিবহনসংগঠন পরিচালনা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জসংক্রান্ত নির্দেশিকা। এভাবে চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  সন্তানের জন্য ওষুধ কিনতে বের হওয়া নারীকে গিলে খেলো সাপ

পরিবহন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করে পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান। বিভিন্ন টার্মিনাল, উপজেলা পর্যায়ে চাঁদা তুলে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে গেছে। এই ফেডারেশনের সবকিছুই চলেছে শাজাহান খানের ইশারায়। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে শাজাহান খানের লোকজন।

তিনি আরও বলেন, শাজাহান খান ও সহযোগীরা চাঁদাবাজির আয়ে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজনের নামে তারা বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ করেছেন। অনতিবিলম্বে তদন্ত করে এসব অবৈধ সম্পত্তি জব্দ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হোক।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ