বাংলাদেশে গোপন কারাগার তথা আয়নাঘরে আটক শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিল। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতনের অংশ হিসেবে মাকে তার শিশুকে দুধ পান করাতেও দেওয়া হতো না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।
অন্তত ছয় শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে গোপন জেলে মাসের পর মাস কাটিয়েছে। জোরপূর্বক গুম তদন্ত কমিশন গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশুদের উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো, এমনকি তাদেরকে এ সময় দুধ পান করতেও দেওয়া হতো না।
৭৭ বছর বয়সী হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনা তার পুরনো মিত্র ভারতে পালিয়ে যান।
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শত শত নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ ও গুমসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে কমিশন বলেছে, যাচাই করে একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে, নারীদেরকে তাদের সন্তানসহ গুম করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালেও এ ধরনের ঘটনার তথ্য পেয়েছে কমিশন।
কমিশন প্রতিবেদনে এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করে, যেখানে একজন গর্ভবতী নারীকে তার দুটি ছোট সন্তানসহ আটকে রাখা হয় এবং তাকে মারধর করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।’
‘কখনো ফিরে আসেনি’
কমিশন বলেছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের বন্দিশালার কক্ষটি দেখিয়েছিলেন, যেখানে তাকে ছোটবেলায় তার মায়ের সঙ্গে বন্দি রাখা হয়েছিল। সেটি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দ্বারা পরিচালিত হতো। ‘তার মা আর ফিরে আসেননি’, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অন্য একটি ঘটনায় এক দম্পতিকে তাদের শিশুসহ আটক করা হয়েছিল। ‘মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে’ বাবাকে চাপ দেওয়ার জন্য শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়াতে দেওয়া হতো না।
ক্ষমতায় থাকাকালে হাসিনার সরকার জোরপূর্বক গুমের ঘটনা অস্বীকার করেছিল। তারা দাবি করেছিল, নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টাকালে ভূমধ্যসাগরে তলিয়ে গেছে।
কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে জড়িত বাহিনীকে চিহ্নিত করা হবে।
‘ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর বহুমুখী প্রভাব পড়েছে, গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি ও আর্থিক সংকট পর্যন্ত হয়েছে’, প্রতিবেদনে যোগ করা হয়।