বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের কথা শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। দু’দিন আগেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র ফিরে আসতে হবে দেড় বছরের মধ্যে। আর এরই জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আমাদের অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত টাইমলাইন আছে শুনে আমি খুশি। তবে তিনি এও বলেন যে, কিন্তু আমরা এর আগে এ ধরনের নাটক দেখেছি যখন অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপরে পরিস্থিতি শুধু আরো খারাপ হয়।
রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তরেই জয় বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সত্যিকারের সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে সাম্প্রতিকটি ছিল ২০০৭ সালে, যখন সেনাবাহিনী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছিল যারা সেটি দুই বছর ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল। পরে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন হাসিনা এবং ১৫ বছর দেশ শাসন করেন।
গত মাসে সজীব ওয়াজেদ রয়টার্সকে বলেছিলেন, তার মা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়াই করতে চায়। ওয়াশিংটনে বসবাসকারী জয় বলেন, তিনি বা অন্তর্বর্তী সরকার কেউই ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আলোচনার সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। তিনি আরো বলেন, ‘প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার ও নির্বাচন করা অসম্ভব। হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন জয়।
হাসিনা কবে দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘সেটা তার ব্যাপার। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের লোকদের নিরাপদ রাখতে চাই, তাই আমি এই ইউনূসের শাসনামলে তাদের ওপর চালানো নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই।’
জয়ের বক্তব্যের ওপর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা সাড়া দেননি।
ভারতীয় মিডিয়া দি প্রিন্ট এ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, মারাত্মক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে হাসিনার পাশে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে গত আগস্টে ভারতে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে আসেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বিশৃঙ্খল অবস্থায় চলে গেলে শক্তিশালী সেনাবাহিনী পরবর্তী ঘটনাগুলোতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সাথে দেখা করেন কারণ সরকারের স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টাকে সামরিক বাহিনী সমর্থন করে।
বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল, হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়ই আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। নোবেল শান্তিবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তা অনুশীলনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ করেনি।
ইউনূসের কার্যালয় বলেছে, সরকারের গঠন করা ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হলে এবং ভোটার তালিকা তৈরি হলে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’ বিএনপি বলেছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করতে চায়। গত মাসে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে হাসিনা দিল্লির কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের আরো অনেক সিনিয়র নেতাকে হয় এক হাজারেরও বেশি লোক মারা যাওয়ার সংঘর্ষে ভূমিকা রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অথবা তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
নির্বাচনী সংস্কার প্যানেলের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পর্যালোচনা করে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ বা নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’