বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হেনেস্তার অভিযোগ করেছেন এক নারী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথম বর্ষেই নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে বয়কট হয়েছিলেন রিফাত রশিদ।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ’ এ সমন্বয়ক রিফাত রশিদের বিরুদ্ধে ‘প্রেমের’ সম্পর্ক থাকা অবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্ক ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী। এমনকি অভিযোগের বিষয় কাউকে জানালে ভুক্তভোগীর আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকিও দেন রিফাত রশিদ।
রিফাত রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত। একই সাথে তিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সক্রিয় সদস্য।
ফেসবুক পোস্টে অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, আমার সাথে রিফাত রশিদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কে থাকা অবস্থায় সে আমাকে অসুস্থ করেছে এবং বারংবার আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। এমনকি নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পলিটিক্যাল সার্কেলসহ র্যান্ডম মানুষজন এবং নিজের বিষয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করতেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, আমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এবং আপত্তিকর মেলামেশা করেন রিফাত। এমনকি তার ‘বেস্টফ্রেন্ড’সহ একাধিক বান্ধবীর সঙ্গে তার শারীরিক ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পাই আমি।
এসব জানাজানি হওয়ার পর ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও পরবর্তীতে হুমকি দেন বলে জানান ওই নারী শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার কাছে ধরা খেয়ে এক্সপোজ এড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে রিফাত। এসময় সে আমাকে নানাবিধ হুমকি প্রদর্শন করেছে এবং পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়ে ইমোশনাল নাটকের আশ্রয় নিয়েছে।
অভিযোগের বিষয় কাউকে জানালে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেন রিফাত রশিদ। এ সংক্রান্ত হোয়াটসঅ্যাপে অভিযুক্ত রিফাত রশিদ ও ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর কথপোকথনের কিছু স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী যেন কাউকে অভিযোগ না করে সেজন্য তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন রিফাত রশিদ। একপর্যায়ে এতে ব্যর্থ হওয়ায় অভিযোগকারী নারীর ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেন।
একটি খুদে বার্তায় রিফাত লিখেন, পোস্ট দেয়া তো সলিউশন না। সল্যুশন চাইলে সল্যুশন করি। সেটা তো ফেসবুক পোস্ট দিয়ে হবে না। আপনি পোস্ট করবেন। আমি সব হারাইয়া আপনার ন্যুড ভাইরাল করবো। একটা ক্যাওয়াজ হবে।
আরেক খুদে বার্তায় রিফাত রশিদ লিখেন, ব্যাপারটা আমি রিফাতের ইন্ডিভিজ্যুয়াল ইস্যু না। আমি পোস্ট দেই, আপনি কই দেন বা আমি পদত্যাগ করি গোটা ব্পাোরটা একটা ন্যাশনাল ইস্যু ক্রিয়েট করবে যেটা চলমান গোটা যেই গণঅভ্যুত্থান সেইটার স্পিরিটেই একটা ধাক্কা খাবে!
এক্সপোজ পোস্ট করলে ব্যাপারটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ কাউন্টার ক্যু করতে পারে বলেও ওই নারী শিক্ষার্থীকে হুমকি দেন রিফাত রশিদ।
নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথম বর্ষেই নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে বয়কট হয়েছিলেন রিফাত রশিদ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কমকে জানান, নারীঘটিত কারণে প্রথম বর্ষে থাকাকালীন রিফাত রশিদকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের নিজ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বয়কট করেন। যার ফলে ক্লাস–পরীক্ষা বাদে বিভাগের অন্য কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারতেন না রিফাত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার রিফাত রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।