সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠসদৃশ একটি ফোনালাপ সামাজিকমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। তিন মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ফোনালাপটি নিয়ে রোববার (২৭ অক্টোবর) রাত থেকে আলোচনার শুরু হয়।
নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে বলতে শোনা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়িঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়? বর্তমানে এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থতার চোখে দেখছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অডিও রেকর্ড না দেখে, শুনে বলতে পারব না। ডিপ ফেকের মাধ্যমে অনেক সময় কণ্ঠ নকল করা যায়।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
রোববার রাতে নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠ সদৃশ একজনকে বলতে শোনা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়ি ঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়?
ফোনকলের অন্য প্রান্তের কণ্ঠটি গোবিন্দগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের দাবি করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে। বেশি ভালো থাকবেন না আপনি। দেখো ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টেকে কি না? কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না। যে কয়টা নাফরমানি করছে তাদের একটাও আস্ত থাকবে না।
এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে শাকিল বলেন, জ্বি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।
শেখ হাসিনা বলেন, একদম একদম।
তখন শাকিল বলেন, আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগোন নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, জ্বি নেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবেও ওই যে সুদখোর ইউনূসের গুটি গুটি চেহারার দ্বার আটকে গেছে মানুষের কাছে।
শাকিল বলেন, জ্বি নেত্রী অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়তেই কেউ মুখ খুলতে পারছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে।
ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জ্বি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান ছিলাম নেত্রী, আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরপর ছিলাম দুবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ওনার বাড়ি গাড়ি সব জ্বালাই পুড়াই দিছে। আমারও বাড়ি গাড়ি সব জ্বালাই পোড়াই দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্যা মামলা দিছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পোড়াই দিছে কে?
শাকিল বলেন, ওরাই নেত্রী, জামায়াত বিএনপি সকলই।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ঘর-বাড়ি নেই?
শাকিল বলেন, জ্বি আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়।
শাকিল বলেন, জ্বি না, না নেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘর-বাড়ি থাকবে না।
শাকিল বলেন, একটা সংশয় নেত্রী, মাননীয় নেত্রী গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। কিংবা তাদের বাড়ি-ঘরেও ওরা যায়নি। ওরা কিভাবে এটাকে?
শেখ হাসিনা বলেন, শোনো ওরা দেখে যেগুলি পোটেনশিয়াল, যেগুলি দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সেইজন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে, কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পোড়ে তাদেরও পুড়বে।
শাকিল বলেন, জ্বি নেত্রী, জ্বি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেল নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মামলা, আমারতো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, আমারতো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি সবাই তালিকা কর। তোমরাও তালিকা কর। ২২৭ মার্ডারের লাইন্সেস পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, শোয়া দুইশো মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেব। তার আগে শোয়া দুইশো হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।
শাকিল বলেন, ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।