প্রেম-ভালোবাসায় পূর্ণ রোমান্টিক দাম্পত্য জীবন এবং তৃপ্তিদায়ক যৌন সম্পর্কের মাপকাঠিতে পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে কম সন্তুষ্ট জাতির শীর্ষ রয়েছে এশিয়ার দুই দেশ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা। ফ্রান্সের গবেষণা সংস্থা ইপসোসর একটি বৈশ্বিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রেমময়তা ও অপূর্ণ যৌন সম্পর্কের এমন জীবনে জাপানিদের পরই অবস্থানে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ।
এশিয়ার এই দুই দেশের নাগরিকরা রোমান্টিক সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অসুখী বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুখ এবং উত্তাপের অভাবের পেছনে কাজ করছে বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ।
জাপানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রেম-সম্পর্ক ও বিয়ে নিয়ে আগ্রহ উবে যাচ্ছে। কর্মজীবনের চাপে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়ার কারণে অনেকেই সম্পর্ক গড়ার পরিবর্তে একা জীবন বেছে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রত্যাশা এবং পরিবার বা সমাজের চাপ অনেককে রোমান্টিক সম্পর্ককে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের উচ্চতা সম্পর্কের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
এগুলোই প্রধান কারণ, যার ফলে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদের সবচেয়ে অসুখী মনে করছেন।
এ বিষয়ে এএফপির বরাতে ফ্রান্স ২৪ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানি ও কোরীয়দের আবেগহীন জীবন দেশ দুটিকে জনসংখ্যার দিকে থেকে সংকটের মুখে ফেলে দিচ্ছে। দেশ দুটির জনসংখ্যা খুব দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক মনে করছেন তারা।
ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক গবেষণা ও জরিপ সংস্থা ইপসোস সম্প্রতি ৩১টি দেশের মানুষের যৌনজীবন এবং রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। চলতি সপ্তাহেই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে দেখা গেছে, জাপানি উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা যৌনসম্পর্কে সন্তুষ্টি পেয়ে থাকেন।
একইভাবে জাপানের চেয়ে খানিকটা ভালো অবস্থানে থাকলেও যৌনতা ও প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে দেশের বেশির ভাগ মানুষের অসন্তুষ্টি দেখা গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির মাত্র ৪৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা যৌনসুখ পেয়ে থাকেন।
সমীক্ষাটিতে সহবাসে থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আত্মতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন এশিয়ার আরেক দেশ ভারত ও উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোর নাগরিকরা। দুটি দেশেরই যৌনজীবন ও প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সন্তুষ্টি দেখানো মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৬ শতাংশ।
গত জুনে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটির নিম্ন জন্মহারকে ‘সংকটজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কারণ, গত বছরের হিসেবে দেশটিতে জন্মহার ছিল মাত্র ১.২ শতাংশ। টানা আট বছর ধরে জন্মহার কমতে কমতে এটি রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল। তবে প্রেমবিমুখ মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও জন্মহারে দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে এখনো এগিয়ে আছে জাপান। জন্মহারের দিক দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন মাত্র শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ।
ইপসোস সমীক্ষায় এটাও দেখা গেছে, সঙ্গী বা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসে সবচেয়ে কম তৃপ্তি অনুভব করেন কোরীয়রা। এই ক্ষেত্রে জাপানিরা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। জীবনে কতটা প্রেম-ভালোবাসা অনুভব করেন এমন প্রশ্নেও জাপানিরাই ছিল সবার নিচে। দেশটির মাত্র ৫১ শতাংশ মানুষ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক অর্থাৎ জীবনে প্রেম অনুভব করেন বলে জানিয়েছেন।
ইপসোস বলছে, জাপানিদের ব্যক্তিত্বই তাদের যৌনতা ও প্রেম-ভালোবাসায় প্রভাব ফেলেছে। কারণ, দেশটির মানুষ রোমান্সের ক্ষেত্রে খুব বেশি আবেগ এবং মনেরভাব প্রকাশ করতে পারেন না।