Monday, December 23, 2024

রিমোট দিয়ে ওজন কমিয়ে ক্রেতাদের ঠকাতেন তারা

আরও পড়ুন

রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ডিজিটাল মেশিনে ওজনে কারসাজি করে ওজন কম দেওয়া চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সম্প্রতি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, সিরাজুল ইসলাম ওরফে সজিব (৩৩), মো. মনির (৩৫), মো. লিটন (৩৮) ও মো. আলাউদ্দিন খাঁন (২৮)। চক্রের মূলহোতা হলেন সজিব। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিন, সাতটি রিমোট কন্ট্রোল ও তাতালসহ ওজন মেশিন কারসাজি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, সজিবের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার পশ্চিম বাজার বাজার এলাকার। সে পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। অনলাইন থেকে বিশেষ কিছু সার্কিট সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিন কারসাজি করে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ওজন কম-বেশি করার কৌশল রপ্ত করেন।

আরও পড়ুনঃ  পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে

এই কৌশল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীদের পণ্যের ওজন কমিয়ে দিতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাইকারি পণ্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ঠকিয়ে আসছিলেন সজিব ও তার চক্রের সদস্য।

রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূরে বসে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা একটি অভিনব ও নতুন ধরনের প্রতারণা। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে এসে প্রতারিত হতেন।

রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, আমরা নতুন ধরনের একটি অপরাধ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, পাইকারি পণ্য বিক্রি করতে এসে অনেকেই ওজনে গরমিল পেতেন। অনেক সময় ক্রেতারাও এমন অভিযোগ করতেন। পরবর্তী সময়ে এমন অভিযোগকে সামনে রেখে কাজ শুরু করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তদন্তের একপর্যায়ে চক্রটির সদস্যদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। রমজান মাস চলছে। সামনে ঈদ। ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে।

আরও পড়ুনঃ  হাতিরঝিলে ভাসছিল যুবকের লাশ

সজিব পেশায় একজন টেলিভিশন মেকানিক। সে অনলাইন থেকে বিশেষ সার্কিট ও রিমোট অন-লাইনে সংগ্রহ করে ডিজিটাল ওজন মেশিন কারসাজি করেন। ফলে ২০০ কেজি পণ্যের ওজন দূরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইচ্ছে মতো কমাতে পারেন। এগুলো তিনি বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন।

মেকানিক সজিব প্রতিটি মেশিন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এই চক্রের কাছে ওজন কম দেওয়ার সাংকেতিক শব্দ হলো ‘গাপসি’। এর অর্থ হলো ওজনে কম দিতে হবে। এসব মেশিন কাপ্তান বাজারে অসাধু পাইকারি মুরগী বা মাংস বিক্রেতারা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। তাদের টার্গেট থাকে নতুন পণ্য বিক্রেতা ও পাইকারি ক্রেতারা।

আরও পড়ুনঃ  ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা হবে, সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

পণ্যের ওজন কম বলাটা এক ধরনের চুরি। এই মেশিনের যন্ত্রপাতি যারা বিক্রি করে, প্রতারণার বিষয়টি বিক্রেতারা জানে কি না এ বিষয়ে তাদেরকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।

রমজানে বাজারে দ্রব্যমূল্যের কারসাজি প্রতিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পণ্যের মূল্য কারসাজির বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছে। আমরা কোথাও অনিয়মের অভিযোগ পেলেই গোয়েন্দা পুলিশ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ