৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনও প্রাণ গেছে শত শত মানুষের। মধ্যবয়সী, কিশোর এমনকি শিশুরাও আছেন নিহতের তালিকায়। যাত্রাবাড়িতে গুলিতে নিহত ১৮ বছরের জিহাদ তাদেরই একজন। সন্তান হারানোর শোকে আকূল জিহাদের পরিবার।
আপা তোর সঙ্গে কথা আছে, আসিস। বড় বোন সাবিকুন্নাহারকে কী কথা বলার ছিল মাদরাসাশিক্ষার্থী জিহাদের? সেটি আর জানা যায়নি। সাবিকুন্নাহার বলেন, ঘটনার দিন আমাকে জিহাদ কল দিয়ে বলে- আপা তোমার সঙ্গে আমি একসাথে বসে কথা বলবো।
আমার কথা আছে। এরপর ভাই আর আমাকে আর কল দেয়নি, আর কথা হয়নি। আজকে ৩০ দিনের বেশি হয়েছে আমাকে আমার ভাই আর আপু বলে ডাকে না। আমি বাসায় এলে আমাকে শুধু বলতো আপা কিছু খাবে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে বিজয় মিছিল শুরু করে দেশবাসী। তবে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে মুক্তিপাগল জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ফ্যাসিবাদের দোসররা। যার একটি এফোড়-ওফোড় করে দেয় জিহাদের বুক। হাসপাতালে নেয়ার আগেই প্রাণ যায় তার।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন জিহাদ। আদরের সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর মা পারভিন আক্তার ও বাবা মোশাররফ হোসেন। বুকফাটা আর্তনাদে বিচার চান শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের।
জিহাদের বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমারা ছেলেকে বলেছি আমাদের জানাজা তুমি দিবে। পরে এটা জিহাদের মা শুনে কেঁদে দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ নিয়ে গেলো। শেখ হাসিনা আর ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে গুলি করে আমার ছেলেকে মারা হয়েছে। তারা হলো গডফাদার তাদের আদেশেই আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমি এর বিচার চাই।
জিহাদের মা পারভিন আক্তার বলেন, যেই ছেলে ঘরে ঢুকলে ঘর আলোকিত হয়ে যেতো আজ সেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেছে। এই দুনিয়াতে আমার থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
শত বারণেও রাজপথ থেকে ফেরানো যায়নি জিহাদকে। বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে জাতীয় পতাকা হাতে দিনের পর দিন স্লোগান দিয়েছেন তিনি। কী অপরাধ ছিল, নিরপরাধ এই তরুণের অস্ফুট কান্নায় সেই প্রশ্ন রাখেন বোন সাবেকুন্নাহার।
তিনি বলেন, আমার ভাই দেশের জন্য ছাত্রদের সঙ্গ দিয়েছে এটি কি ওর অপরাধ ছিল। আমার ভাইয়ের বুকটা ঝাজরা করে দিয়েছে। আমার ভাই এভাবে শুয়ে আছে এর জন্য দায়ী কে? এভাবে কি আর শুয়ে থাকার কথা ছিল।
ঘাতকের বুলেটে জিহাদের কণ্ঠস্তব্ধ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার অপূর্ণ চাওয়াটা পূরণের আকাঙ্ক্ষা এখন সবার।