হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশু হত্যা। শত শত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বুক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া। নির্বিচার মানুষ হত্যা। গণহত্যা, ক্রসফায়ার। গুম, খুন, ‘আয়নাঘর’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন। গ্রেফতার, কারাবাস। দেড় দশকের মাফিয়া তন্ত্র। ব্যাংক লুট। রিজার্ভ লুট। লন্ডন, দুবাই, অস্ট্রেলিয়ায় অর্থপাচার। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডহোম, কানাডায় বেগমপাড়া।
দ্রব্যমূল্যের উল্লম্ফন। মুদ্রাস্ফীতি। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। ডলার সঙ্কট। অর্থনৈতিক সেক্টর,স্বাস্থ্যখাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, সকল ধরনের সেবা খাতে দুর্বৃত্তায়ন। বিচার বিভাগ ধ্বংস। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ। বিচারহীনতা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। জাতীয় সংসদকে মুজিব বন্দনা-তীর্থে পরিণত করা। নির্বাচন কমিশন ধ্বংস। ভিন্নমত সমূলে উৎপাটন চেষ্টা। সংবাদমাধ্যমের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। ‘সাংবাদিকতা’কে স্তাবকতায় অবনমিত করা। মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্বাসন দেয়া। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, পরিবেশ দূষণ।
নদী দখল, বনভূমি, রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথের সম্পত্তি আত্মসাৎ, লুটতরাজ, হেলমেট বাহিনী, হাতুড়িলীগ, গুণ্ডাবাহিনী, ধর্ষণে সেঞ্চুরি, সেভেন মার্ডার, সাগর-রুনি হত্যা, দর্জিদোকানি বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা, বুয়েটে আবরার হত্যা। পুলিশবাহিনীকে দানবে পরিণত করা। এ সব কিছুর উৎসই এক। রক্ত-নদী পেরিয়ে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বার জন্ম নিলো যে বাংলাদেশÑ তার উৎসমূলও অভিন্ন। তা হলো প্রবল প্রতাপে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা হাসিনার শাসন। ‘
নির্বাচন’ নামক বিষয়টিকে তামাশায় পরিণত করে শেখ হাসিনা ক্ষমতার রথে চড়ে যে অন্তহীন যাত্রা শুরু করেছিলেন- সেটির মূলমন্ত্রণাও ছিলো এই একটি। তা হচ্ছে, সংবিধান থেকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা তুলে দেয়া। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক কলমের এক খোঁচায় তুলে দেন এ ব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়ে উপ্ত হয় শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের মাফিয়াতন্ত্রের বীজ। দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে যে দুর্যোগ স্থায়ী রূপ পেয়েছিলো- সেটির মূলে রয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়।
বহুল সমালোচিত, নিন্দিত ও ঘৃণিত সেই ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার এবং বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। পরবর্তী ৮ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম.হাফিজউদ্দিন খান, জুবিরুল হক ভুইয়া এবং জারাহ রহমান সমন্বিতভাবে এ রিট করেন। তাদের পক্ষে রিটটি ফাইল করেন সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভুইয়া। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।
রুল জারির পর অ্যাডভোকেট শরীফ ভুঁইয়া বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাস করা সংবিধান পরিপন্থী।
তিনি বলেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন পরবর্তী দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অগ্রাহ্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হয়। ফলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। যে কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থী। আমরা তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়েছি।
শঠতাপূর্ণ পঞ্চদশ সংশোধনী : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ছিলো শেখ হাসিনার দেড় দশকের স্বৈরশাসনের প্রধান ‘আইনি ভিত্তি’। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সন্নিবেশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে বাকশালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত আ’লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। ‘রাষ্ট্রীয় মূলনীতি’তে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। আর এ সংশোধনী আনা হয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের শঠতাপূর্ণ এক রায়ের ভিত্তিতে।
ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়। ২০১০ সালের ১০ মে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ’র ‘সংক্ষিপ্ত ও বিভক্ত’ রায় দেয়।
ওই রায়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে, সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী ‘ভবিষ্যতের জন্য’ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। যদিও হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এর আগে সংশোধনীটিকে ‘সাংবিধানিক’ মর্মে রায় দেন।
দেশকে আজকের গভীর সঙ্কটে নিপতিত করার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয় বিচারপতি খায়রুল হকের বিতর্কিত এ রায়কে। সংক্ষিপ্ত রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী তড়িঘড়ি বাতিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হয়। যে রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয় সেটির প্রেক্ষাপট, আইনি ভিত্তি, নৈতিক ভিত্তি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি ছিলো খুবই দুর্বল। রায়ও ছিলো গলধপূর্ণ ও অত্যন্ত দুর্বল। খায়রুল হকের দেয়া অনৈতিক রায়ের ভিত্তিতে সংশোধিত সংবিধান হয়ে যায় শঠতাপূর্ণ, গোঁজামিল ও গণতন্ত্রের নামে শুভঙ্করের ফাঁকিতে পরিপূর্ণ।
এ রায়ে সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে, সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী ‘ভবিষ্যতের জন্য’ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। যদিও হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এর আগে সংশোধনীটিকে সাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকরা পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে হওয়ার পক্ষে মত দেন। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে বিচারপতিদের বাদ দেয়ার এখতিয়ার সংসদের ওপর ছেড়ে দেন।
সিনিয়র বিচারপতিকে সুপারসিড বিচারপতি খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করে আওয়ামীলীগ সরকার। ত্রয়োদশ সংশোধনীর পক্ষে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে অন্তত: ৬ বছর এটি শুনানির অপেক্ষায় ছিলো। খায়রুল হক এসেই ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করেন। অবসর গ্রহণের ৮ দিন আগে, মাত্র দশ দিনের শুনানির ভিত্তিতে বিভক্ত আদেশটি দেন। আদেশটি সমর্থনকারী অন্য তিনজন বিচারপতিকেও পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি করা হয়। যার মধ্যে একজনকে প্রধান বিচারপতি করা হয় আরেকজন বিচারপতিকে সুপারসিড করে। প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মধ্যে যোগসাজশের বিষয়টিই এখানে প্রমাণিত হয়। খায়রুল হকের সংক্ষিপ্ত আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে আত্মস্বার্থ ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে তিনিই হতেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সংশোধনী এনে আওয়ামীলীগ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। ক্ষমতাকে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’র মতো পাকাপোক্ত করেন শেখ হাসিনা। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে তৎকালীন সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল একটি ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ফসল। এ বন্দোবস্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পথই শুধু সুগম করেনি, সব রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার সমসুযোগও সৃষ্টি করেছিল। পক্ষান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন-রীতি মূলত: ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা ত্যাগের গণতান্ত্রিক স্বাভাবিক পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়।
২০১১ সালে সংসদে ‘মেজরেটারিয়ান’ পদ্ধতিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে সংবিধানকে নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে। এর ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি হয়, যাতে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে।
ফিরতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার :
পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা নিয়ে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন রয়েছে গুরুতর। কারণ সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের ‘উইল’ বা ‘অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি,’। তাই তাদের সম্মতি ছাড়া এটির সংশোধন অনভিপ্রেত। আমাদের মূল সংবিধানে না থাকলেও পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এতে গণভোটের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য সুপ্রিমকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের সময় গণভোটের বিধানটি আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল, কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমঝোতার ভিত্তিতে ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি যুক্ত হয়েছিলো। পঞ্চদশ সংশোধনী হলো একটি অসাংবিধানিক সংশোধন, কারণ এটি পাশের আগে গণভোটের আয়োজন করা হয়নি।
পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭ক অনুচ্ছেদ সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে অসংশোধনযোগ্য করার ফলে এগুলো মৌলিক কাঠামোর মর্যাদা পায়। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংসদ দ্বারা অসংশোধনযোগ্য। শুধুমাত্র গণপরিষদ এটি সংশোধন করতে পারে। এভাবে মৌলিক কাঠামোর সম্প্রসারণ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তত্ত্বেরই লঙ্ঘন। সংবিধান বিশেষজ্ঞ মরহুম মাহমুদুল ইসলাম তার এক গ্রন্থে উল্লে করেন, ‘এক সংসদ আরেক সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না,’ কারণ সংবিধান সংশোধন সংসদের অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে তা পরবর্তী দুই মেয়াদের জন্য জীবিত রাখা হয়েছে, যা মাহমুদুল ইসলামের ভাষায়, আইনের শাসন ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। তার মতে, ‘একটি নিন্দিত ব্যবস্থাকে আগামী দুই সংসদ নির্বাচনের জন্য জিয়ে রেখে আপিল বিভাগ বিচারিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইনসভার সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন। যা সুপ্রতিষ্ঠিত সাংবিধানিক আইনশাস্ত্র, আইনের শাসন ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থি।’ এছাড়া এবিএম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদীয় অনুমোদনের শর্ত জুড়ে দিয়ে তার চূড়ান্ত রায়কে পরিবর্তন করেছেন। বিচারপতি আব্দুল মতিনের ভাষায় এটি ‘আদালতের সাথে জালিয়াতি’ এবং পেশাগত আচরণবিধি লঙ্ঘনের সমতুল্য। শেখ হাসিনা সরকারের করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের রিটে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজ্ঞরা মনে করেন, প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট যে রুল জারি করেছেন, এটি চূড়ান্ত হলে সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি আগের ধারায় ফিরে যেতে পারে। সংবিধানে পুনরুদ্ধার হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে রুদ্ধ হতে পারে হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ।